হিন্দুদের কাছে মন্দির, এবং মুসলিম দের কাছ মাজার । সংগৃহীত ছবি
হিন্দুদের কাছে মন্দির, আর মুসলিম দের কাছে মাজার। আর এই একই দেবতার কাছে পুজো দেন দুই সম্প্রদায়ের মানুষ। এমনই দৃশ্য উঠে এসেছে পশ্চিম বর্ধমান জেলার কাঁকসা থেকে। এখানে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে নির্জলা উপবাস করেন হিন্দু মহিলারা। আর দিনের শেষে কাঁকসার সিলামপুরে বারা খান ও মোবারক খানের মন্দিরে পুজো দিয়ে উপবাস ভাঙেন হিন্দু মহিলারা।
কাঁকসার সিলামপুরে এই মন্দিরে ভিড় জমান হাজার হাজার মানুষ। প্রতি বছর চৈত্র মাসে তিথি অনুযায়ী এক দিনের উপবাস করেন মহিলারা। কাঁকসার সিলামপুর ছাড়াও বাঁকুড়া বীরভূম সহ আশেপাশের ভিন জেলা থেকেও বহু মানুষ ভিড় জমান এই মন্দিরে।
শোনা যায় এই মন্দিরে দুটি সমাধি রয়েছে। একজন হলেন পীর হজরত বারা খান শহীদ ওআর একজন হজরত মোবারক খান শহীদ। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, দুই জন ভালো বন্ধু ছিলেন। হজরত মোবারক খান শহীদ যিনি আগে সত্য নারায়ণ গোস্বামী নামেই পরিচিত ছিলেন।
পরে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। দুই বন্ধু এলাকায় ঘুরে মানুষের কাছে ঈশ্বরের বাণী প্রচার করে বেড়াতেন। পরে দুই বন্ধু একই সঙ্গে দেহ রাখলে তাঁরা শহীদ হিসেবে এলাকার মানুষের কাছে পরিচিতি পান।
প্রায় ১১০০ বছর আগে তারা দেহ রাখলে তাদের দুই জনের সমাধি দেওয়া হয় পাশাপাশি। পরে সেখানে স্বপ্নাদেশ পেয়ে এক খাদিম তাদের পুজো শুরু করেন। বহু মানুষ এখানে আসেন তাদের মনস্কামনা নিয়ে। হিন্দুদের পুজো দেওয়ার কয়েকদিন পরেই মুসলিম মহিলারা একদিনের রোজা রাখেন। এবং দিনের শেষে পুজো দিয়ে রোজা ভাঙেন দুই শহীদের মাজারে।
প্রতি বছর চৈত্র মাসে পুজো উপলক্ষ্যে বসে মেলা। এই মন্দির নিয়ে বলতে গিয়ে স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, "আমাদের কাছে এটা মন্দির, সেই সঙ্গে মাজারও। এটা নিয়ে আমরা কাঁকসাবাসীরা রীতিমতো গর্ব করি। গোটা রাজ্যে এই মন্দির এক সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির নিদর্শন। এখানে হিন্দু মহিলারা পুজো দেন, আর তার কয়েকদিন পরেই মুসলিম মহিলারা একদিনের রোজা রাখেন। শুধু তাই নয়, দিনের শেষে পুজো দিয়েই মুসলিম মহিলারা রোজা ভাঙেন এখানে। এই অভুতপূর্ব মেলবন্ধন একমাত্র আমাদের কাঁকসায় দুই শহীদের মাজারেই দেখতে পাওয়া যায়।"
স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, এই মুহূর্তে যখন রাজ্যের বেশ কিছু জায়গায় সাম্প্রদায়িক হানাহানির খবর মিলেছে, সেখানে এই দুই শহীদের মাজারের কথা শুনে মানুষের মন পরিবর্তন হতে বাধ্য।