ভাত খেত ‘সাত্ত্বিক’ কুমির
নাম বাবিয়া। কুমিরের এমন নামকরণ সাধারণের একটু বিসদৃশ ঠেকতে পারে। হয়তো বা একটু অকারণ আদুরেও। তবে ভাতের থালা হাতে নিয়ে মন্দিরের পুরোহিত যখন নাম ধরে ডাকেন, তখন লেজ ঝাপটে দিব্য চলে আসত সে। ‘সোনা মুখে’ খেয়েও নিত যত্ন করে আনা নিরামিষ খাবার। সেই নিরামিশাষী কুমিরের মৃত্যু হল কেরলে।
কেরলের শ্রী আনন্দপদ্মনাভ মন্দিরের লাগোয়া পুকুরে থাকত বাবিয়া। মন্দিরের সিঁড়ি যেখানে থেমেছে, সেখান থেকেই শুরু পুকুর ঘাট। সেই পুকুরই ছিল বাবিয়ার চারণ ক্ষেত্র।
এ মন্দিরের বিষ্ণু পূজিত হন। নাম শ্রী অনন্ত পদ্মনাভস্বামী। কথিত আছে, কেরলের তিরুঅনন্তপুরমের পদ্মনাভস্বামীর আদিরূপ এই বিগ্রহ। দিন-রাত তারই প্রসাদান্নে তুষ্ট থাকত বাবিয়া।
বেলা গড়ালেই থালা সাজিয়ে অন্নভোগ লাগে বিগ্রহের। বাবিয়ার নিরামিষ ভোজ হত তার পর। প্রসাদান্নের থালা হাতে মন্দিরের লাগোয়া পুকুর ঘাটে নেমে আসতেন পুরোহিত। বাবিয়াকে নিজে হাতে প্রসাদের ভাত খাওয়াতেন তিনি।।
মন্দিরে মাছ মাংস ছোঁওয়াও পাপ। কুমির হলেও বাবিয়ার ক্ষেত্রে নিয়মের হের ফের হয়নি। মন্দিরের পুরোহিত বলেছিলেন, ‘‘এই ব্যবস্থায় বাবিয়ারও অসুবিধা হয়নি কোনও দিন। আজন্ম শাকাহারি ছিল সে। মাছ বা মাংস নয়, ভাতই ছিল তার প্রিয় খাবার।
দুপুরে পেট ভরে ভাত । রাতের খাবারও তাই। মেনু বিশেষ বদলাত না। বাবিয়া দিনভর যে পরিমান ভাত সারাদিনে খেত তাতে তাকে ‘ভেতো কুমির’ও বললেও অত্যুক্তি হয় না।
প্রতিদিন দু’বেলা এক কেজি চালের ভাত লাগত বাবিয়ার। যে পুকুরে তার বাসস্থান ছিল সেখানে মাছের কমতি ছিল না। তবে তাদের না কি সে ছুঁয়েও দেখত না বাবিয়া।
বয়স সত্তর পার। দু চোয়ালে ঝকঝকে ধারালো দাঁতের সারি। কিন্তু সেই দাঁত মাংস ছোঁয়নি কখনও। উৎসব-পার্বণে মন্দিরের ভোগের সামান্য হেরফের হত না, তা নয়। তখন নিরামিষ হলেও ভাল মন্দ খাবার জুটত। বছরের বাকি দিনগুলিতে গত ৭০ বছরে অন্ন ভোগই ছিল বাবিয়ার নিত্যদিনের খাবার।
বাবিয়ার ‘বন্ধু’ ছিলেন মন্দিরের প্রধান পুরোহিত চন্দ্রশেখর। বাবিয়া পুকুরে থাকাকালীনই সেখানে নেমে দু’বেলা স্নান করতেন তিনি। আসলে ববিয়া কতটা নিরীহ তা প্রমাণ করতে চাইতেন তিনি।
মন্দিরে আসা ভক্তদের বাবিয়ার কাছে যাওয়ার উৎসাহও দিতেন চন্দ্রশেখর। বহুবার ভক্তরা তাঁকে বলতে শুনেছেন, ‘‘ওর কাছে গেলেও কিছু করবে না। ও সাধারণ কুমির নয়, সাক্ষাৎ ঈশ্বরের দূত।’’