১২ বছর পর বিশ্বকাপ জয়ের স্বপ্ন
টানটান উত্তেজনা। সমানে-সমানে লড়াই। চাপ, পাল্টা চাপের খেলা। বুধবার রাতে আরবসাগরের তীর দেখল সব কিছুই। সব পেরিয়ে অবশেষে স্বস্তি। ১২ বছর পর বিশ্বকাপের ফাইনালে ভারত। ১২ বছর আগে যে মাঠে ট্রফি জিতেছিল তারা, সেখানেই নিউ জ়িল্যান্ডকে ৭০ রানে হারিয়ে ফাইনালের টিকিট নিশ্চিত করে রোহিত শর্মার দল পাড়ি দিচ্ছে আমদাবাদে।
আগে ব্যাট করে ভারত ৩৯৭ রান তোলার পর ওয়াংখেড়ের গ্যালারিতে কোনায় কোনায় উৎসব শুরু হয়ে গিয়েছিল। হয়তো বাকি দেশেও চিত্রটা ছিল একই। সেমিফাইনালের মতো মহা চাপের ম্যাচে নিউ জ়িল্যান্ড ৩৯৮ রান তাড়া করে ভারতকে হারিয়ে দেবে, এটা অনেকেই কল্পনা করতে পারেননি। কিন্তু ক্রিকেট মহান অনিশ্চয়তার খেলা বলেই বুকটা দুরুদুরু করল কিউয়িদের ইনিংসের অন্তত ৪৩ ওভার পর্যন্ত। ড্যারিল মিচেলের সঙ্গে জুটি গড়া কেন উইলিয়ামসন ফিরে গেলেও তত ক্ষণে গ্লেন ফিলিপস বল বাউন্ডারির বাইরে পাঠানো শুরু করে দিয়েছেন। যশপ্রীত বুমরার বলে তুলে খেলতে গিয়ে বাউন্ডারির ধারে রবীন্দ্র জাডেজার হাতে ক্যাচ তুলে নেওয়ার পরেই আবার ওয়াংখেড়েতে উৎসব শুরু।
সেরার পুরস্কার পেলেন মহম্মদ শামিই। কিন্তু অন্তত তিনজনকে সেই পুরস্কার ভাগ করে দেওয়া গেলে তবেই হয়তো যোগ্য বিচার হত। বিরাট কোহলি, শ্রেয়স আয়ার না থাকলে ভারতের রান ৩৯৭ ওঠে না। সে ক্ষেত্রে এই ম্যাচ নিউ জ়িল্যান্ডের জিতে যাওয়ার কথা। আবার শামি না থাকলে কোহলি, শ্রেয়সের কৃতিত্বও দাম পায় না। বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে সাতটি উইকেট নেওয়া চাট্টিখানি কথা নয়। যে ক্রিকেটারকে বিশ্বকাপের প্রথম চারটি ম্যাচে বসিয়ে রেখেছিল ভারত, তিনি সেমিফাইনালে সাত উইকেট নিয়ে দলকে ফাইনালে তুলে দিচ্ছেন!
ভারতের পরিকল্পনা তখন স্পষ্ট। রোহিত এক দিকে আক্রমণ করবেন, শুভমন ধরে খেলবেন। ৪৭ রানে রোহিত ফেরার পর ভূমিকাটা পাল্টে গেল। ক্রিজে আসা কোহলি তখন ধরে খেলবেন, শুভমন মারবেন। ঠিক সে ভাবেই এগোতে থাকলেন তাঁরা। রানও উঠতে থাকল। রাচিন রবীন্দ্র এবং গ্লেন ফিলিপসকে এনেও উইলিয়ামসন বুঝতে পারছিলেন না, ভারতীয় ব্যাটারদের আটকাতে ঠিক কী দরকার।
কিউয়ি বোলারদের উপর দাপট দেখাতে পারলেও মুম্বইয়ের প্রচণ্ড আর্দ্রতাকে হারাতে পারেননি শুভমন। ৭৯ রানের সময় পায়ের পেশিতে টান ধরল। মাঠে কিছু ক্ষণ চিকিৎসকদের পরিচর্যা নিলেন। কিন্তু মাঠ ছেড়ে বেরিয়ে যেতে হল অচিরেই। কিন্তু নিউ জ়িল্যান্ডের তাতে আদৌ কোনও সুবিধা হল না। শ্রেয়স নামার পর রানের গতি কিছুটা কম হয়ে গেল ঠিকই। কিন্তু ভারতের পরিকল্পনায় কোনও খামতি ছিল না। অহেতুক তাড়াহুড়ো না করে কোহলি এবং শ্রেয়স খুচরো রান নিয়ে স্কোরবোর্ড সচল রাখলেন। মাঝের এই ওভারগুলো সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। ধৈর্য বজায় রাখা উপায় নেই। কোহলি এবং শ্রেয়স ঠিক সেটাই করলেন। কোনও রকম ঝুঁকির রাস্তায় যাননি।