বাংলা সিনেমা বাঁচানোর লড়াইয়ে দেব, কৌশিক, ঋতুপর্ণারা
বাংলা সিনেমা কি হারিয়ে যাবে অন্য ভাষার জাঁকজমকে? নিজের রাজ্যে, নিজের ভাষার ছবি যদি থিয়েটারে স্থান না পায়, তবে কীসের আত্মসম্মান!
বাংলা ছবি কি আজও লড়াই করে টিকে থাকবে, নাকি মাথা উঁচু করে ফিরবে নিজের জায়গায়? সেই প্রশ্নের মুখোমুখি দাঁড়িয়েই এবার এক হয়েছিলেন টলিউড তারকারা। দেব, প্রসেনজিৎ, কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়, সৃজিত, শিবপ্রসাদ, নিসপাল রানে, ঋতুপর্ণা—সবার কণ্ঠে একটাই সুর—বাংলা ছবির অস্তিত্বের লড়াই এখন ভাষা ও সংস্কৃতির যুদ্ধ!
গত কয়েক বছর ধরে বাংলা সিনেমা রাজ্যের বিভিন্ন হলে কোণঠাসা। বিশেষ করে যখন কোনও বড় হিন্দি ছবি মুক্তি পায়, তখন নাকি হলমালিকদের উপর চাপ দেওয়া হয়—একই দিনে চারটে শো, সবই হিন্দি ছবির! বাংলা ছবি? বাদ! প্রাইম টাইমের জায়গা তো দূর অস্ত, অনেক সময় এক সপ্তাহেই বন্ধ হয়ে যায় তার প্রদর্শন। পরিশ্রম করে বানানো ছবি পৌঁছায় না দর্শকের কাছে। মুখ ফিরিয়ে নেয় বিনিয়োগকারীও।
এই পরিস্থিতি বদলাতে সম্প্রতি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চিঠি পাঠান টলিউডের শীর্ষ ব্যক্তিত্বরা। তাঁদের সাফ কথা, “এটা শুধু ইন্ডাস্ট্রির নয়, বাংলার গৌরব বাঁচানোর লড়াই।” চিঠিতে ছিল যন্ত্রণার পাশাপাশি জেদ—এ লড়াই ভাষার, সংস্কৃতির, আত্মপরিচয়ের।
৭ অগাস্ট, অরূপ বিশ্বাসের নেতৃত্বে এক জরুরি বৈঠকে মিলিত হন টলিউডের প্রতিনিধিরা। দেব স্পষ্ট বলেন, “‘ধূমকেতু’ শুধু একটা ছবি নয়, এটি আমাদের ভবিষ্যৎ। আজকের বৈঠক শুধুই একটি সিনেমার জন্য নয়, গোটা বাংলা ছবির স্বপ্ন বাঁচানোর জন্য।” পরিচালক কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, “নিজের রাজ্যে বাংলা ছবি যদি একঘরে হয়, তবে কোথায় যাবে এই ইন্ডাস্ট্রি?” তিনি আরও বলেন, ‘‘বৈঠক ভালো হয়েছে। এমন কোনো থিয়েটার থাকবে না যারা বাংলা ছবি চালাবে না। প্রাইম টাইমেই চালাবে সারা বছর। আগে যেটা বারণ ছিল। আজকের পর থেকে এটা কেউ বলতে পারবে না। এটাই সিদ্ধান্ত হয়েছে।’
ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত জানান, “আমার অনেক ছবি হঠাৎ করেই হল থেকে নামিয়ে দেওয়া হয়েছে। এতদিন কেউ শোনেনি। এবার অন্তত একটা সাহসিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। দেরিতে হলেও ভালোর জন্য।” অরূপ বিশ্বাস আশ্বাস দেন, “যে সমস্যাগুলো ছিল, সেগুলোর সমাধান হয়ে গেছে। এখন থেকে বাংলা ছবিও প্রাইম টাইমে দেখানো হবে। মুখ্যমন্ত্রী নিজেও বাংলার ভাষা ও সংস্কৃতির প্রশ্নে আপসহীন। আমরা বাংলা সিনেমার পাশে আছি।”
এই মুহূর্তে বাংলা সিনেমার সামনে বড় চ্যালেঞ্জ, একদিকে ‘ওয়ার টু’—হিন্দি ইন্ডাস্ট্রির অন্যতম বিগ বাজেট ছবি, অন্যদিকে ‘ধূমকেতু’—বাংলা ইন্ডাস্ট্রির সম্মানের লড়াই। কিন্তু লড়াইটা এখন কেবল টিকিট কাটার নয়, এটা মন জয়ের লড়াই। ভাষা, সংস্কৃতি, ইতিহাস, আত্মপরিচয়—সব কিছু নিয়েই এ লড়াই।
বৈঠক শেষে, সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এখন শুরু নতুন এক অধ্যায়ের। বাংলা সিনেমা যদি আবার তার হারানো জায়গা ফিরে পায়, যদি প্রেক্ষাগৃহে বাজে তার চেনা গান, যদি দর্শক আবার ভরসা রাখে নিজের ভাষার ছবিতে—তবে তা শুধু এক ইন্ডাস্ট্রির জয় নয়, তা হবে বাংলার জয়।