জুবিন-তদন্তে দাবি স্ত্রীর
অসমের জনপ্রিয় গায়ক জুবিন গর্গের মৃত্যু নিয়ে প্রশ্ন আরও গভীর হচ্ছে দিনদিন। এবার সেই প্রশ্ন তুললেন তাঁর স্ত্রী, ফ্যাশন ডিজাইনার গরিমা শইকিয়া গর্গ। তাঁর কথায়, অসম পুলিশ চাইলে এই রহস্য অনেক আগেই মিটে যেত, কিন্তু ইচ্ছে নেই বলেই সত্য সামনে আসছে না। গরিমার দাবি, যাঁরা এখন পর্যন্ত গ্রেফতার হয়েছেন, তাঁরা কেউই সত্যি বলছেন না, বরং ঘটনার আসল চিত্র গোপন করার চেষ্টা করছেন। তাঁর আরও অভিযোগ, জুবিনের মৃত্যু কোনও দুর্ঘটনা নয়, বরং তা একরকম অবহেলার ফল।
গত ১৯ সেপ্টেম্বর সিঙ্গাপুরে উত্তর-পূর্ব ভারত উৎসবে যোগ দিতে গিয়েছিলেন জুবিন। সেই সফরেরই অংশ হিসেবে তিনি অংশ নেন এক ইয়ট ভ্রমণে। সেন্ট জন’স আইল্যান্ডে যাওয়ার সময়েই ঘটে যায় মর্মান্তিক ঘটনাটি। সিঙ্গাপুর প্রশাসনের দেওয়া মৃত্যুসনদে লেখা ছিল—‘ড্রাউনিং’, অর্থাৎ ডুবে মৃত্যু। কিন্তু দেশে ফেরার পর থেকেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে—যে মানুষটির চিকিৎসকদের পরামর্শে সাঁতার কাটা বারণ ছিল, তাঁকে কেন জলে নামতে দেওয়া হল? কোথায় ছিল নিরাপত্তা? কোথায় চিকিৎসা সহায়তা?
জুবিনের মৃত্যু ঘিরে তৈরি হওয়া এই বিতর্কের পর অসম সরকার তদন্তভার দেয় রাজ্যের ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন ডিপার্টমেন্ট বা CID-কে। পরে তৈরি হয় একটি বিশেষ তদন্ত দল বা SIT। তারও পরে ৪ অক্টোবর সরকার গঠন করে একটি বিচারিক কমিশন, যার দায়িত্বে রয়েছেন গৌহাটি হাই কোর্টের বিচারপতি সৌমিত্র সাইকিয়া। তাঁকে ছ’মাসের মধ্যে তদন্তের রিপোর্ট জমা দিতে বলা হয়েছে। অথচ এর মধ্যেই গরিমার মনে হচ্ছে তদন্তের গতি অত্যন্ত মন্থর। তাঁর স্পষ্ট মন্তব্য, “অসম পুলিশ চাইলে যেকোনও রহস্যের জট ছাড়াতে পারে। কিন্তু সবকিছুর জন্য প্রয়োজন ইচ্ছে। আমরা ধৈর্য ধরছি, সহযোগিতা করছি, কিন্তু এখন চাই দ্রুত পদক্ষেপ।”
এই মামলায় এখনও পর্যন্ত পাঁচজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে—জুবিনের ম্যানেজার সিদ্ধার্থ শর্মা, অনুষ্ঠান আয়োজক শ্যামতনু মহন্ত, ব্যান্ডের দুই সদস্য শেখর যোগী গোস্বামী ও অমৃতপ্রভা মহন্ত, এবং সন্দীপন গার্গ, যিনি আসাম পুলিশের অফিসার ও জুবিনের আত্মীয়। তদন্তকারীদের মতে, শ্যামতনু মহন্তের পরিবারের প্রভাব এবং রাজনৈতিক যোগাযোগও রয়েছে। মামলায় ইতিমধ্যেই খুনের অভিযোগ যুক্ত হয়েছে, যা এই রহস্যকে আরও জটিল করে তুলেছে। গরিমা গার্গ বলেন, “ওরা জানত জুবিনকে সাঁতার কাটতে মানা করা হয়েছিল। তবুও ওকে জলে নামতে দেওয়া হয়েছিল। এটা নিছক অবহেলা নয়, এর পেছনে আরও কিছু আছে বলে আমাদের সন্দেহ।”