সুপ্রিয়ার গর্ভে নষ্ট হয়েছিল উত্তমের সন্তান
একসময় উত্তমকে ভালবাসার জন্য সুপ্রিয়া দেবীকে শুনতে হয়েছিল নানা কটূক্তি। নিন্দুকরা তো তাঁকে উত্তমের রক্ষিতা বলতেও পিছপা হয়নি। তবে সুপ্রিয়া চৌধুরী কখনও এসবে পাত্তা দেননি। কারণ, উত্তমের প্রতি তাঁর ভালাবাসার টান ছিল এসব থেকে অনেক উর্ধ্বে। তাই হয়তো, সব নিন্দা-চর্চাকে সরিয়ে উত্তমের প্রতি তাঁর ভালবাসা উজাড় করেছিলেন সুপ্রিয়া। উত্তমও তাই। সুপ্রিয়ার প্রতি এতটাই নির্ভর ছিলেন যে তিনি, সমস্ত সুখের চাবিকাঠি জমা রেখেছিলেন সুপ্রিয়ার কাছেই। কিন্তু সব সুখ কি আর চাইলেই পাওয়া যায়? যায় না! কারণ, বিধাতার লেখা কেউ-ই মুছতে পারে না। ঠিক যেমন পারেননি মহানায়ক উত্তম এবং কিংবদন্তি অভিনেত্রী সুপ্রিয়া চৌধুরী। তাই তো অনেক সাধ থাকলেও, উত্তমের সন্তানের মা হওয়া হয়নি সুপ্রিয়ার। এমনকী, সন্তানের নাম ঠিক করে নিয়েও, সেই নাম অন্তরের এককোণে লুকিয়ে ফেলতে হয়। কারণ, সুপ্রিয়ার গর্ভেই নষ্ট হয় উত্তমের সন্তান!
সুপ্রিয়া ও উত্তমের প্রেম বরাবরই ছিল চর্চায়। যেদিন রাতে ভবানীপুরের বাড়ি ছেড়ে, স্ত্রী গৌরীদেবীকে ছেড়ে উত্তম এসে দাঁড়িয়ে ছিলেন সুপ্রিয়ার বাড়ির দরজায়। সেদিন সুপ্রিয়ার বুকের মাঝে আতঙ্কের ঝড় বয়ে গিয়েছিল। কিন্তু উত্তম যখন তাঁকে বলেছিলেন, তোমার কাছে একটু শান্তির খোঁজে এলাম বেণু! সুপ্রিয়া আর একটিও প্রশ্ন করেননি মহানায়ককে। কাছে টেনে নিয়েছিলেন উত্তমকে। সুপ্রিয়া জানতেন, এই সম্পর্ক নিয়ে নানা কটূক্তি শুনতে হবে তাঁকে। যতদিন উত্তম-সুপ্রিয়া বেঁচে ছিলেন, ততদিনই শুনেছেন নানা কথা। কিন্তু তাঁদের ভালবাসা এসবের থেকে উর্ধ্বে ছিল। আর তাই তো তাঁদের সেই প্রেমের একমাত্র চিহ্ন যখন নষ্ট হয়ে যায়, মারাত্মক ভেঙে পড়েছিলেন উত্তম ও সুপ্রিয়া। আচমকা থমকে গিয়েছিল তাঁদের জীবন।
ঘটনাটি বেশ কয়েকবছর আগের। পরিচালক ঋতুপর্ণ ঘোষ তখন বেঁচে রয়েছেন। ঋতুপর্ণর সঙ্গে জুটি বেঁধে অচেনা উত্তম নামের এক অনুষ্ঠানের দায়িত্বভার কাঁধে পড়ে ‘চন্দ্রবিন্দু’র অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায়ের। সেই অনুষ্ঠানে হাজির হয়েছিলেন উত্তম কুমারের কাছের মানুষরা। হাজির হয়েছিলেন সুপ্রিয়া চৌধুরীও। উত্তমের মৃত্যুর পর সেভাবে কখনই মুখ খোলেননি সুপ্রিয়া। তবে ঋতুপর্ণ ঘোষ ও অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায়ের অচেনা উত্তম অনুষ্ঠানে এসে, উত্তমের সম্পর্কে বলতে গিয়ে, এমন এক কথা বলেছিলেন সুপ্রিয়াদেবী। যা শুনে থমকে গিয়েছিল সবাই।
ক্যামেরা চলছে। স্পটলাইটের নিচে তখন সুপ্রিয়া দেবী উত্তমের স্মৃতিতে বুঁদ। কখনও চোখ ছলছল, কখনও উত্তম ও তাঁর জীবনের অধ্যায়কে সামনে রেখে উজ্জ্বল হাসি। কিন্তু হঠাৎই যেন সেই হাসি ম্লান হয়ে গেল সুপ্রিয়ার। কোনও প্রশ্ন না করতেই, সুপ্রিয়া বলে ওঠেন, তাঁর আর উত্তমের এক সন্তান হওয়ার কথা ছিল! সুপ্রিয়ার মুখে একথা শুনে সেদিন চমকে গিয়েছিল সবাই। কিন্তু সুপ্রিয়া, কিছুটা থমকে গেলেন। এরপর জানালেন, সেই সন্তান তাঁর গর্ভেই নষ্ট হয়ে যায়। সুচিত্রা যেন সেদিন প্রস্তুত ছিলেন না একথা প্রকাশ্যে আনার। কিন্তু উত্তম আবেগের বশে বলে ফেলেছিলেন। আর সেই আবেগকে সঙ্গে নিয়েই তিনি জানিয়ে ছিলেন, উত্তম আগে থেকেই ভেবে রেখেছিলেন সেই সন্তানের নাম। মহানায়ক চেয়েছিলেন, কন্যা সন্তান হলে তার নাম হবে ‘ভ্রমর’! সেদিন এর থেকে বেশি কিছু আর বলতে চাননি সুপ্রিয়া দেবী। বরং এই কথার পরেই, দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলে, উত্তমের জীবনের অন্যান্য অধ্যায়গুলিকে দর্শকের সামনে নিয়ে আসেন। কিন্তু সেদিন সুপ্রিয়ার সেই শব্দবাক্য, সন্তানের খবর যেন প্রতিধ্বনি হয়ে বার বার ফিরে এসেছিল সেখানে উপস্থিত প্রত্যেকটি মানুষের মনে।