মাটি নাকি তামা কোন ধরনের বাসনে রান্না করা বেশি উপকারী?
মানুষের খাবার ও স্বাস্থ্য অনেকটাই নির্ভর করে কোন বাসনে রান্না করা হচ্ছে তার উপর। প্রাচীন ভারতীয় আয়ুর্বেদ থেকে শুরু করে বর্তমান বিজ্ঞানও মানছে যে ধাতু বা মাটির তৈরি বাসনে রান্না করলে খাবারের গুণাগুণে প্রভাব পড়ে। বিশেষ করে তামার বাসন ও মাটির বাসনের ব্যবহার নিয়ে অনেকের মনে প্রশ্ন জাগে—কোনটি বেশি উপকারী?
তামা প্রাচীনকাল থেকেই রান্না ও সংরক্ষণের কাজে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এতে আছে –
অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল গুণ – তামার বাসন ব্যাকটেরিয়া ও জীবাণু ধ্বংস করতে সক্ষম, ফলে খাবার দীর্ঘসময় ভালো থাকে।
খনিজের যোগান – সামান্য পরিমাণে তামা শরীরের জন্য উপকারী। এটি হজম শক্তি বাড়ায়, হিমোগ্লোবিন তৈরিতে সাহায্য করে এবং স্নায়ুতন্ত্র সুস্থ রাখে।
আয়ুর্বেদ মতে উপকারী – আয়ুর্বেদে বলা হয়, তামা শরীরের তিন দোষ (বাত, পিত্ত, কফ) নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
তবে, খাঁটি তামার বাসনে টক খাবার (টমেটো, লেবু, দই ইত্যাদি) রান্না করলে রাসায়নিক বিক্রিয়া হয়ে ক্ষতিকর যৌগ তৈরি হতে পারে, যা বিষক্রিয়া ঘটাতে পারে। আধুনিক কালে অনেক ক্ষেত্রে তামার বাসনকে টিন বা স্টেইনলেস স্টিল দিয়ে প্রলেপ দেওয়া হয় যাতে খাবারের সঙ্গে সরাসরি রাসায়নিক বিক্রিয়া না ঘটে।
মাটির বাসনে রান্না করলে কী হয়?
মাটির বাসন ভারতীয় সংস্কৃতির এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। গ্রামাঞ্চলে এখনও অনেকে মাটির হাঁড়ি ব্যবহার করেন। এতে আছে –
প্রাকৃতিক খনিজের উৎস – মাটির হাঁড়ি থেকে ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম ও আয়রন খাবারে মিশে যায়, যা শরীরের জন্য উপকারী।
তেল কম লাগে – মাটির বাসনে রান্না করলে খাবারে প্রাকৃতিকভাবেই আর্দ্রতা থাকে, ফলে বেশি তেল লাগে না।
সুগন্ধ ও স্বাদ বাড়ে – মাটির হাঁড়ি খাবারে এক বিশেষ মাটির ঘ্রাণ ও স্বাদ যোগ করে, যা স্বাস্থ্যকর এবং প্রাকৃতিক।
ক্ষতিকর রাসায়নিক নেই – এতে কোনো ধাতব বিক্রিয়া হয় না, তাই টক বা অ্যাসিডিক খাবারও নিরাপদে রান্না করা যায়।
হজমে সহায়ক – মাটির বাসনের ক্ষুদ্র ছিদ্র খাবারে বায়ু প্রবাহ বজায় রাখে, ফলে খাবার হালকা ও সহজপাচ্য হয়।
সমস্যা হল মাটির হাঁড়ি ভঙ্গুর, সহজে ভেঙে যায়। পরিষ্কার ও শুকনো না রাখলে ফাটল ধরে বা ছত্রাক জন্মাতে পারে।
কোনটি বেশি স্বাস্থ্যকর?
তামা ও মাটির বাসন দুটিই উপকারী, তবে শর্তসাপেক্ষে। তামার বাসন ভালো, যদি সঠিকভাবে টিন প্রলেপ দেওয়া থাকে এবং এতে টক খাবার রান্না না করা হয়। মাটির বাসন আধুনিক জীবনে আরও বেশি স্বাস্থ্যকর বিকল্প। এতে কোনো রাসায়নিক বিক্রিয়া হয় না, প্রাকৃতিক খনিজ মিশে যায়, কম তেলে রান্না হয় এবং খাবার হজমে সহায়তা করে।