সবজির মোড়কে শীতের জাদু, বাঁধাকপি-ফুলকপির রোলে মন ভাল করা স্ন্যাক্স |
লাউয়ের খোসা না ফেলে এইভাবে ভেজে ফেলুন, এই মুচমুচে খাবার স্বাস্থ্য সচেতন বাঙালিদের নতুন পছন্দ
লাউয়ের খোসা না ফেলে এইভাবে ভেজে ফেলুন
বাংলার হেঁশেলে এখন নতুন চমক! এতদিন যা আবর্জনা ভেবে ফেলে দেওয়া হত, সেই লাউয়ের (Bottle gourd) খোসা এখন স্বাস্থ্য সচেতনদের পাতে নতুন মহার্ঘ। বিশেষত ঘটি বাড়ির রান্নাঘরে এটি এক নতুন মোড় নিয়েছে, যেখানে সাধারণ সবজির উচ্ছিষ্ট অংশই বদলে যাচ্ছে মুখরোচক ও পুষ্টিকর ভাজায় (Lauki Peel Fry)। কেবল স্বাদের জন্যই নয়, এর পুষ্টিগুণ নিয়েও চলছে জোর আলোচনা। এই অভিনব পদ একদিকে যেমন খাদ্যরসিকদের মন জয় করছে, তেমনই বর্জ্য কমানোর এক নতুন দিক উন্মোচন করছে, যা আধুনিক বাঙালির খাদ্যভাবনায় নতুন দিগন্ত খুলে দিচ্ছে (Healthy and Trendy)।

স্বাস্থ্যের প্রতি ক্রমবর্ধমান সচেতনতা
বর্তমান সময়ে মানুষের জীবনযাত্রায় স্বাস্থ্যের প্রতি সচেতনতা ক্রমশ বাড়ছে। খাদ্যাভ্যাস থেকে শুরু করে দৈনন্দিন জীবনযাপনে স্বাস্থ্যকর অভ্যাস অন্তর্ভুক্ত করার প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এই পরিবর্তনের ঢেউ রান্নাঘরেও এসেছে, যেখানে নিত্যনতুন পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে ঐতিহ্যবাহী পদগুলিকে আরও স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে পরিবেশন করা হচ্ছে। অপ্রচলিত উপাদানও এখন রান্নার মূল স্রোতে ফিরে আসছে, যা আগে হয়তো ফেলনা বলে মনে করা হতো। এমনই একটি উদাহরণ হল লাউয়ের খোসা। পুষ্টিগুণের প্রাচুর্য এবং সহজলভ্যতার কারণে লাউয়ের খোসা ভাজা এখন স্বাস্থ্য সচেতন মানুষের কাছে এক নতুন পছন্দের খাবার হিসেবে জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে (Healthy and Trendy Bengali Food)। এই নতুন ট্রেন্ড শুধুমাত্র খাবারের মেনুতে বৈচিত্র্য আনছে না, বরং খাবারের অপচয় কমাতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
রান্নাঘরে ঘটিদের নতুন ভাবনা
বাংলার রন্ধনশৈলীতে ‘ঘটি’ ঘরানার নিজস্বতা রয়েছে। বিভিন্ন শাক-সবজি এবং তার বিভিন্ন অংশ ব্যবহার করে সুস্বাদু ও পুষ্টিকর পদ তৈরি করার ঐতিহ্য দীর্ঘদিনের। লাউয়ের খোসা ভাজা নিয়ে সাম্প্রতিক আগ্রহ এই রন্ধনশৈলীতে এক নতুন মোড় এনেছে। সাধারণত লাউয়ের তরকারি বা ডালে খোসা ফেলে দেওয়া হতো, কিন্তু এখন সেই খোসাকেই সযত্নে ব্যবহার করে তৈরি হচ্ছে মুখরোচক পদ (Lauyer Khosa Bhaja)। এটি শুধু রান্নার কৌশলকেই প্রভাবিত করছে না, বরং সামাজিক বার্তাও বহন করছে – অপ্রয়োজনীয় জিনিস থেকেও মূল্যবান কিছু তৈরি করা যায়। পূর্বে যেখানে লাউয়ের খোসা ফেলনা বা গরিবের খাবার হিসেবে বিবেচিত হতো, এখন সেটি গর্বের সঙ্গে পরিবেশন করা হচ্ছে।

লাউয়ের খোসার অজানা পুষ্টিগুণ
লাউ কেবল সাধারণ সবজি নয়, এটি পুষ্টিগুণে ভরপুর। তবে অনেকেই জানেন না, খোসাতেও রয়েছে বহু উপকারী উপাদান। লাউয়ের খোসায় (Lauyer Khosa Bhaja) প্রচুর ফাইবার থাকে, যা হজম প্রক্রিয়াকে উন্নত করতে সাহায্য করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সহায়ক। এছাড়াও এতে রয়েছে ভিটামিন সি, ভিটামিন বি কমপ্লেক্স এবং গুরুত্বপূর্ণ খনিজ পদার্থ যেমন ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, জিঙ্ক। এই উপাদানগুলি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে, হাড় মজবুত রাখতে এবং শরীরের সামগ্রিক স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সাহায্য করে। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ত্বকের স্বাস্থ্য ভালো রাখে এবং বার্ধক্যের প্রক্রিয়া ধীর করে। পুষ্টিবিদদের মতে, "লাউয়ের খোসায় থাকা ডায়েটারি ফাইবার হজমের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এটি রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণেও সহায়ক, যা ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য উপকারী।"
সহজ প্রস্তুত প্রণালী: ঘরোয়া রান্নার আকর্ষণ
লাউয়ের খোসা ভাজা (Lauyer Khosa Bhaja) তৈরি করা সহজ এবং কম সময়ে সম্ভব। খুব বেশি উপকরণের প্রয়োজন হয় না, যা এটিকে গৃহিণীদের কাছে আরও আকর্ষণীয় করেছে। প্রথমে লাউয়ের খোসা ছোট ছোট টুকরো করে কেটে নেওয়া হয়। এরপর সামান্য তেল, কালো জিরে, কাঁচা লঙ্কা, নুন-হলুদ দিয়ে ভেজে নেওয়া হয়। স্বাদ বাড়ানোর জন্য সামান্য চিনি বা পেঁয়াজও ব্যবহার করা যায়। এটি গরম ভাত বা রুটির সাথে দারুণ মানায়। হালকা তেতো স্বাদ এবং মুচমুচেভাব অনেককে আকৃষ্ট করে। এই সরল প্রস্তুত প্রণালী এটিকে ভারতীয় রান্নাঘরের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশে পরিণত করেছে।