শীতের দাপটে জবুথবু বাংলা, শহর কলকাতায় ভাঙছে সর্বনিম্ন তাপমাত্রার রেকর্ড |
মাশরুম চাষ করুন বাড়িতে, বড় ইনভেস্টমেন্ট ছাড়াই এত আয় হবে গুনে শেষ করতে পারবেন না!
মাশরুম চাষ করুন বাড়িতে
রান্নাঘরের কোণে শুরু হতে পারে চাষবাস-এ কথা শুনলে অনেকেরই ভ্রু কুঁচকে যেতে পারে। কিন্তু সময় বদলেছে। শহুরে জীবনের চাপ, বাজারদরের ঊর্ধ্বগতি আর পুষ্টিকর খাবারের চাহিদা-এই তিনের মাঝে দাঁড়িয়ে মাশরুম চাষ (Mushroom Farming) এখন শুধু বিকল্প নয় বরং বাস্তবসম্মত এক সমাধানও।
জমি নেই? সমস্যা নেই। বড় লগ্নি নেই? তাতেও কোনও বাধা নেই। একটু যত্ন, নিয়ম মেনে কাজ আর ধৈর্য থাকলে বাড়ির মধ্যেই শুরু করা যায় মাশরুম চাষ।
কোন ধরনের মাশরুম চাষ করতে পারেন?
ভারতে মূলত তিন ধরনের মাশরুমের চাষ সবচেয়ে বেশি দেখা যায়-বাটন মাশরুম (Button Mushroom), অয়েস্টার মাশরুম (Oyster Mushroom) এবং মিল্কি মাশরুম (Milky Mushroom)। আবহাওয়ার উপর নির্ভর করে এই তিনটির চাহিদা ও উৎপাদন। ঠান্ডা জলবায়ুতে বাটন মাশরুম ভাল হয়। তুলনায় অয়েস্টার আর মিল্কি মাশরুম উষ্ণ আবহাওয়ায় ভাল হয়। ফলে দেশের প্রায় সব জায়গাতেই কোনও না কোনও ধরনের মাশরুম চাষ সম্ভব। সাম্প্রতিক সময়ে কেউ কেউ আবার শিটাকে মাশরুম (Shiitake Mushroom) চাষও করছেন।
কীভাবে শুরু করবেন?
১. মাশরুমের জাত বাছাই
শুরুর প্রথম ধাপই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। আপনি কোন এলাকায় থাকেন, সেখানকার তাপমাত্রা কেমন-সেটা বুঝে জাত বাছাই করতে হবে। নতুনদের জন্য অয়েস্টার মাশরুম তুলনামূলক সহজ। কম যত্নেই ফলন ভালো হয়।
২. কম্পোস্ট তৈরি (Composting)
মাশরুম চাষের মেরুদণ্ড হল কম্পোস্ট। সাধারণত খোলা জায়গায় সমতল ট্রের উপর কম্পোস্ট তৈরি করা হয়, যাতে জল দাঁড়িয়ে না থাকে। বৃষ্টি থেকে বাঁচাতে ছাউনি দরকার।
কম্পোস্ট দুই ধরনের হতে পারে-সিন্থেটিক কম্পোস্ট (Synthetic Compost) এবং ন্যাচারাল কম্পোস্ট (Natural Compost)।
সিন্থেটিক কম্পোস্টে থাকে গমের খড়, ব্রান, ইউরিয়া, জিপসাম, ক্যালসিয়াম অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট বা অ্যামোনিয়াম সালফেট। এগুলো ভাল করে মিশিয়ে জল ছিটিয়ে স্তূপ করে রাখা হয়।
ন্যাচারাল কম্পোস্টে গমের খড়, জিপসামের সঙ্গে থাকে টাটকা ঘোড়ার গোবর ও পোলট্রি সার। জল ছিটিয়ে নিয়মিত উল্টে দিতে হয়। অ্যামোনিয়ার গন্ধ মানেই বুঝতে হবে পচন প্রক্রিয়া ঠিক চলছে।
কম্পোস্ট তৈরি হয়ে গেলে ১৫–১৮ সেন্টিমিটার পুরু করে ট্রেতে ভরতে হয়। সবসময় আর্দ্রতা বজায় রাখা জরুরি।
৩. স্পনিং (Spawning)
এই ধাপে কম্পোস্টের মধ্যে মাশরুমের মাইসেলিয়াম (mycelium) বোনা হয়। কখনও উপরে ছিটিয়ে, কখনও আবার কম্পোস্টের সঙ্গে মিশিয়ে। এরপর খবরের কাগজ দিয়ে ঢেকে জল ছিটিয়ে ভিজিয়ে রাখা হয়।
৪. কেসিং সয়েল (Casing Soil)
কম্পোস্টের উপর একটি সুরক্ষামূলক স্তর হিসেবে কেসিং সয়েল দেওয়া হয়। মাটি আর গোবর মিশিয়ে ভালো করে ছেঁকে জীবাণুমুক্ত করে নিতে হয় তার আগে। এই স্তর দেওয়ার পর প্রায় ২৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় ৭২ ঘণ্টা রাখতে হবে।
৫. ক্রপিং (Cropping)
প্রায় ১৫ দিনের মাথায় ছোট ছোট মাশরুমের মাথা দেখা যায়। তখনই বোঝা যাবে ফসল প্রস্তুত।
৬. হারভেস্টিং (Harvesting)
মাশরুম তুলতে হয় আলতো হাতে। মাটিতে হালকা চাপ দিয়ে আস্তে ঘুরিয়ে, যাতে পরের দফার ফলনেও সমস্যা না হয়।