ঐতিহ্যের কোলাপুরী চপ্পল
ভারতের ঐতিহ্য নকল করার খেসারত দিল ইতালির জনপ্রিয় ফ্যাশন সংস্থা প্রাডা। ভারতের ঐতিহ্যশালী কোলাপুরি চপ্পলের মতো ডিজাইনকে নিজেদের বলে চালানোর চেষ্টা করে বিতর্কের মুখে পড়ে প্রাডা। শেষপর্যন্ত চাপের মুখে পড়ে তারা স্বীকার করে নিল, বিশেষ ওই পাদুকা আসলে ভারতের কোলাপুরি চপ্পলেরই অনুকরণ।
১৩ শতকে কোলহাপুরে তৈরী এক বিশেষ ধরেন পাদুকা যা কোলাপুরী চপ্পল নামে পরিচিত। এটি মূলত কোলহাপুরের স্থানীয় কারিগরদের তৈরি চামড়ার পাদুকা। তাদের একটি স্বতন্ত্র নকশা থাকে, যেখানে টি-স্ট্র্যাপ এবং বিনুনিযুক্ত চামড়ার কাজ দেখা যায়। সম্প্রতি ২০২৬ সালে পুরুষদের ‘সামার কালেকশন’-এর অংশ হিসেবে ফ্ল্যাট, চামড়ার, নকশা করা জুতো তৈরি করেছিল ইটালির ওই ফ্যাশন সংস্থা প্রাডা। সেই স্যান্ডেল প্রকাশ্যে আসতেই চড়া দামের ট্যাগ পড়ে তাতে। যা সোশাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়তেই রীতিমতো আঁতকে ওঠেন ভারতীয়রা। আর তা দেখে সবার আগে ক্ষোভে ফেটে পড়েন মহারাষ্ট্রের বাসিন্দারা। এ তো হুবহু তাঁদের কোলাপুর জেলার ঐতিহ্যবাহী পাদুকা! ‘কোলাপুরী চপ্পল’ নামে যা সর্বজনবিদিত।
২৩ জুন মিলানে ফ্যাশন শোয়ের আয়োজন করেছিল বিখ্যাত বিলাসবহুল ফ্যাশন ব্র্যান্ড প্রাডা। সেখানে পোশাকের বাহারের মাঝেই নজর কেড়েছিল বাদামি রংয়ের চামড়ার চপ্পল। দেখতে হুবহু ভারতের কোলপুরি চপ্পলের মতো। বিষয়টি দেখে অনেকেই খুশি হয়েছিলেন। তবে ওই জুতোর উৎপত্তি বা কারিগরদের উল্লেখ না থাকায় দানা বাঁধে বিতর্ক। চাপের মুখে পড়তে হয় এই বিদেশি ফ্যাশান সংস্থাকে। চাপের মুখে পড়ে নিজেদের কীর্তির কথা স্বীকার করে প্রাডা
এরপর সংস্থার এক প্রতিনিধি বলেন, ‘২০২৬ সালে পুরুষদের গ্রীষ্মকালীন ফ্যাশন শোয়ে ব্যবহৃত স্যান্ডেল ভারতীয় কোলাপুরি চপ্পলের আদলে তৈরি। বিষয়টি আমরা মেনে নিচ্ছি। ভারতের এই ঐতিহ্য কয়েকশো বছরের। কারিগরির এই ঐতিহ্যবাহী ধারাকে আমরা স্বীকৃতি জানাই।’
একসময়ে রাজারাজড়ারা পা ঢাকতেন এই জুতোয়, সেটাই ছিল আভিজাত্যের প্রতীক। পরবর্তীতে তা ফ্যাশন দুনিয়ায় অন্য মাত্রা আনে। পুরুষ, মহিলা নির্বিশেষে অনেকেই মারাঠি স্টাইল পছন্দ করে ফেলেন। কলকাতায় গজিয়ে ওঠে ‘কোলাপুরী হাউস’। ২০১৯ সালে তা ‘জিওগ্রাফিক্যাল ইন্ডিকেশন’ (GI) তকমাও পায়।অভিযোগ, কোলাপুরি ব্যবহার করলেও তার ভারতীয় উৎপত্তির কথা জানায়নি প্রাডা। ফ্যাশন ব্র্যান্ডের কর্তৃপক্ষকে চিঠিও লেখেন তিনি। তার উত্তরেই এমন প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে ইতালির অন্যতম ফ্যাশন ব্র্যান্ড।