দাদার বাহন ময়ূরে বিরাজমান ‘ত্রিশুণ্ড গণেশ’!
বুধবার থেকেই গণপতি বন্দনায় মেতেছে গোটা দেশ। গণেশের বাহন যে ইঁদুর তা সকলের জানা। কিন্তু জানেন কি? পুণেতে এমনও এক মন্দির আছে যেখানে গণপতির বাহন ইঁদুর নয়, বরং দাদা কার্তিকের মতো ময়ূর। এমনকী এখানে গণেশের বিগ্রহ খানিক আলাদা। একটি নয়, এই বিগ্রহের রয়েছে তিন তিনটি শুঁড়।
পুণে শহরের বুকে সোমওয়ার পেঠে রয়েছে প্রায় ২৫০ বছর পুরনো একটি গণেশ মন্দির। সেখানেই দেখা মেলে অন্য গণেশের। তিনটি শুঁড়ের কারণেই মা-দুর্গার সন্তান এখানে পরিচিত ‘ত্রিশুণ্ড’ গণপতি নামে। বিগ্রহের বিরল রূপেই মন্দিরের নামও ‘ত্রিশুণ্ড’। ব্যাসল্ট পাথরের এই ছয়টি হাতবিশিষ্ট গণেশমূর্তি রত্ন ও গহনায় সুসজ্জিত। এই মন্দিরের সঙ্গে রয়েছে বাংলার যোগ।
ত্রিশুণ্ড মন্দির তৈরির কাজ শুরু হয় ১৭৫৪ সালে। মন্দিরটি সম্পূর্ণ হতে সময় লাগে ১৬ বছর। কথিত আছে, এই মন্দিরের প্রতিষ্ঠা করেন গিরি গোঁসাই সম্প্রদায়ের সন্ন্যাসী ভীমগিরিজি গোঁসাই। প্রথমে এটি নাকি শিবমন্দির হিসেবেই নির্মাণ করা হয়েছিল। মন্দিরের ছাদের অসংখ্য শিবলিঙ্গ তেমনই আভাস দেয়। অবশ্য পড়ে মন্দিরটি গণেশ মন্দির হিসেবেই প্রসিদ্ধ হয়। আঠেরো শতকে মন্দিরটি শুধু পুজোস্থলই ছিল না, একে ব্যবহার করা হত সাধনক্ষেত্র হিসেবেও। এখানেই হয়েছিল ভীমগিরিজির সমাধিও।
‘ত্রিশুণ্ড’ গণপতি মন্দিরের স্থাপত্যে রয়েছে দারুণ বৈচিত্র। মন্দিরটি তৈরি হয়েছে কালো ব্যাসল্ট পাথরে। আকারে আয়তকার হলেও মিল খুঁজে পাওয়া যায় প্রাচীন গুহামন্দিরের। রাজস্থানি,মালওয়া ও দাক্ষিণাত্যের ছোঁয়া, পাশাপাশি মারাঠি প্রভাব। সবমিলিয়ে স্থাপত্য ভিন্ন ঘরানার। মন্দিরের ভাস্কর্যে ফুটে উঠেছে পৌরাণিক জীবজন্তু, দেবতার পাশাপাশি দেখা গিয়েছে যুদ্ধের জীবন্ত দৃশ্যও। একটি ফলকে খোদাই করা আছে বাংলার বুকে ঘটে যাওয়া পলাশীর যুদ্ধের পরবর্তী ঘটনা। ব্রিটিশ বাহিনী ও গণ্ডারদের প্রতীকী ছবি। তার ভিতরে সংস্কৃত, দেবনাগরী ও ফারসি ভাষায় লিপি।গীতার শ্লোকেরও দেখা মিলবে মন্দিরগাত্রে। ত্রিশুণ্ড গণপতি মন্দির রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে পুণে পুর কর্তৃপক্ষ। ঐতিহ্য বজায় রেখে চলছে মন্দিরের পুনর্নির্মাণ কাজ। একদিকে ধর্মীয় ভক্তি, স্থাপত্যশিল্প ও ঐতিহাসিক গুরুত্ব সবমিলিয়ে ‘ত্রিশুণ্ড’ গণপতি মন্দির পুণেতে পর্যটকদের বড় আকর্ষণ।