পণের শিকলে বন্দি দেশ
আইন আছে। আছে সচেতনতা মূলক প্রচার। তারপরও পণের মতো মারণ প্রথার কবল থেকে রেহাই তো দূর, বরং ক্রমশ বিষিয়ে উঠছে সমাজের এই দগদগে ঘা। রিপোর্ট বলছে, এক বছরে দেশে এই পণের বলি হয়ে প্রাণ হারিয়েছেন ৬,৪৫০ জন মহিলা। ভয়াবহ রিপোর্টই এবার প্রকাশ্যে আনল জাতীয় মহিলা কমিশন। যেখানে দেখা যাচ্ছে, এই তালিকায় দেশের মধ্যে শীর্ষে জায়গা করে নিয়েছে বিজেপি শাসিত রাজ্য উত্তরপ্রদেশ।
ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ড ব্যুরোর (NCRB) তথ্যের ভিত্তিতে মহিলা কমিশনের তরফে যে তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে সেখানে দেখা যাচ্ছে, ২০২২ সালে গোটা দেশে পণপ্রথার বলি হয়ে মৃত্যু হয়েছে ৬,৪৫০ জন মহিলার। ২০১৪ সালে এই সংখ্যাটা ছিল ৮,৫০০ যা ২০২২ সালে কিছুটা কমেছে বলে দাবি কমিশনের। ২০২৩, ২০২৪ সালে দেশের অপরাধ সংক্রান্ত রিপোর্ট পাওয়া যায়নি বলে দাবি এই সংস্থার। মহিলা কমিশনের তরফে আরও জানানো হয়েছে, ২০২৩ সালে পণের জেরে হেনস্থার শিকার হয়েছেন ৪,৭৯৭ জন।
২০২২ সালের এনসিআরবির রিপোর্টের ভিত্তিতে জাতীয় মহিলা কমিশনের তরফে জানানো হয়েছে, পণের বলি হয়ে দেশে মৃতের তালিকায় শীর্ষে উত্তরপ্রদেশ। বিজেপি শাসিত এই রাজ্যে একবছরে মৃত্যু হয়েছে ২,২১৮ জনের। আর এক বিজেপি শাসিত রাজ্যে বিহারে মৃতের সংখ্যা ১,০৫৭ জন। মধ্যপ্রদেশে মৃত্যু ৫১৮ জনের, দক্ষিণের রাজ্যগুলিতে (কর্নাটক, তেলেঙ্গানা, তামিলনাড়ু, কেরালা, অন্ধ্রপ্রদেশ) ৪৪২ জন। তারপর যথাক্রমে রয়েছে পশ্চিমবঙ্গ, ওড়িশা, ঝাড়খণ্ড। পাশাপাশি ২০২৪ সালে মহিলা কমিশনের কাছে পণ সংক্রান্ত নির্যাতনের অভিযোগ দায়ের হয়েছে ৪৩৮৩টি। ওই বছরেই ২৯২ জনের মৃত্যুর অভিযোগ দায়ের হয়। এছাড়া ২০১৭ সাল থেকে ২০২২ পর্যন্ত বছরে গড়ে প্রায় ৭,০০০ মহিলার মৃত্যু হয়েছে পণের জেরে।
তবে পরিস্থিতি অত্যন্ত গুরুতর হলেও প্রশাসনিক ক্ষেত্রে যে এই বিষয়ে গাছাড়া মানসিকতাও সামনে এসেছে জাতীয় মহিলা কমিশনের রিপোর্টে। যেখানে দেখা গিয়েছে, বছরে ৭,০০০ মহিলার মৃত্যু ও এই সংক্রান্ত অভিযোগ দায়ের হলেও ৪,৫০০টি মামলায় চার্জশিট জমা পড়েছে। অর্থাৎ ৬৪ শতাংশ। দোষী সাব্যস্ত হওয়ার হার আরও কম। তা ১০ শতাংশের নিচে। কিছু কিছু রাজ্যে তা মাত্র ১ থেকে ২ শতাংশ।