মরদেহের সামনে দাঁড়িয়ে প্রতিজ্ঞা ছোট্ট ছেলের
বাবার শেষযাত্রায় দাঁড়িয়ে কাঁপা কাঁপা গলায় ছেলেটি বলল “আমি গর্বিত আমার বাবাকে নিয়ে। ওঁর সব স্বপ্ন আমি পূরণ করব।”
হরিয়ানার (Haryana) রোহতকে সাইবার সেলে কর্মরত এএসআই (Haryana ASI Death) সন্দীপ কুমার লাঠার (Sandip Kumar Lathar), যিনি মঙ্গলবার আত্মহত্যা করেন বলে অভিযোগ, তাঁর শেষকৃত্যে এমন দৃশ্যই চোখে পড়ল। পাশে কাঁদছে পরিবারের সকলে। সামনে সাংবাদিকরা, আর মাঝখানে এক কিশোরের দৃঢ় প্রতিজ্ঞা, বাবার লড়াই শেষ করা।
লাঠারের মৃত্যুর সঙ্গে জড়িয়ে গেছে আরও এক উচ্চপদস্থ পুলিশ অফিসারের মৃত্যুর রহস্য। রোহতকের এই এএসআই তাঁর আত্মহত্যার আগে একটি নোট রেখে গিয়েছিলেন। সেই নোটে তিনি অভিযোগ করেন এক আইপিএস অফিসার ওয়াই পুরণ কুমার–এর বিরুদ্ধে, যিনি সম্প্রতি চণ্ডীগড়ে আত্মহত্যা করেন।
এই দু'টি ঘটনার যোগসূত্রেই নড়েচড়ে বসেছে গোটা হরিয়ানা প্রশাসন। লাঠারের স্ত্রীর অভিযোগের ভিত্তিতে আত্মহত্যায় প্ররোচনার মামলা (FIR) দায়ের হয়েছে। পাশাপাশি, একটি ভিডিও-ও উদ্ধার হয়েছে, যা তাঁরই তৈরি বলে দাবি পুলিশের।
জুলানায় সংবাদমাধ্যমকে লাঠারের মেয়ে বলেন, “আমার বাবা দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করতে গিয়ে প্রাণ দিয়েছেন। উনি শহিদ। আমার বিশ্বাস, সরকার ও হরিয়ানা পুলিশ আমাদের পাশে থাকবে।”
পরিবারের শোকযাত্রা রূপ নেয় প্রতিবাদে। জিন্দে অনুষ্ঠিত হয় শেষকৃত্য। শতাধিক যুবক মোটরবাইকে জাতীয় পতাকা হাতে চলেছেন পুলিশের গাড়ির পাশে, যার মধ্যে ছিল লাঠারের দেহ। উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় নেতা থেকে শুরু করে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরাও।
হরিয়ানার মুখ্যমন্ত্রী নায়ব সিং সাইনি বুধবার লাঠার পরিবারের সঙ্গে দেখা করেন। এর পর দিন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী মনোহরলাল খট্টর ঘোষণা করেন, “লাঠারের স্ত্রীকে সরকারি চাকরি দেওয়া হবে। তাঁর সন্তানদের পড়াশোনার সমস্ত দায় নেবে রাজ্য সরকার।”
সরকারি আশ্বাসে কিছুটা স্বস্তি মিললেও, প্রশ্ন রয়ে গেছে যে দুই পুলিশ অফিসারের রহস্যমৃত্যুর তদন্ত কত দূর এগোবে?
পুলিশের প্রতিক্রিয়া, ‘দুটি প্রাণ গেছে, ব্যবস্থা নিতে হবে’। হরিয়ানার ডিরেক্টর জেনারেল অফ পুলিশ (ডিজিপি) ওপি সিং বলেন, “দুটি জীবন হারালাম। দুজনেই আমাদের সহকর্মী ছিলেন। এমন পরিস্থিতি যাতে আর না হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে।”
তিনি জানান, অফিসারদের পারিবারিক সহায়তা ব্যবস্থাকে আরও শক্তিশালী করার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। অন্যদিকে, পুরণ কুমারের মৃত্যুর কারণ অনুসন্ধানে চণ্ডীগড় পুলিশ ইতিমধ্যেই ছয় সদস্যের বিশেষ তদন্ত দল (SIT) তৈরি করেছে।