বাধ্যতামূলক হলো ‘বাংলা’
শিয়ালদহ এলাকার পানীয় জলের সমস্যা নিয়ে কলকাতা পুরসভার (Kolkata Municipal Corporation) অধিবেশনে ইংরেজিতে প্রশ্ন করায় বিতর্কে জড়ালেন শাসকদলের কাউন্সিলর মোনালিসা বন্দ্যোপাধ্যায়। 0তিনি ওয়ার্ড নম্বর ৪৯-এর কাউন্সিলর। তাঁর ইংরেজি প্রশ্ন শুনে মেয়র ফিরহাদ হাকিম বলেন, “ভাষা তো ইংরেজি! আমি কোন ভাষায় উত্তর দেব?” তখন পুরসভার চেয়ারপার্সন মালা রায় তাঁকে বলেন, “আপনি বাংলাতেই উত্তর দিন।” মেয়রও বাংলাতেই উত্তর দেন।
এই ঘটনার পরেই চেয়ারপার্সন মালা রায় স্পষ্ট নির্দেশ দেন যে, ‘পুরসভার (Kolkata Municipal Corporation) অধিবেশনে সব প্রশ্ন ও প্রস্তাব বাংলাতেই করতে হবে। হিন্দি বা ইংরেজিতে প্রশ্ন করা হলে, তার বাংলা অনুবাদ দিতে হবে।’ এমন একটি নির্দেশিকাও জারি করা হয়েছে।
ফিরহাদ হাকিম এই প্রসঙ্গে খানিকটা রসিকতার ছলেই বলেন, “আমি তো সোজাসাপটা মানুষ, বাংলা ছাড়া অন্য ভাষা তেমন বুঝি না। চেয়ারপার্সন বোধহয় আমার সুবিধার কথা ভেবেই এই নিয়ম চালু করেছেন!”
এর আগেও মোনালিসা বন্দ্যোপাধ্যায় পুরসভার অধিবেশনে ইংরেজিতে প্রশ্ন করেছেন। তিনি বলেন, “ইংরেজিতে প্রশ্ন করা যাবে না, এমন কোনও লিখিত নিয়ম আগে ছিল না। এখন যদি নতুন করে বাংলায় লেখার নির্দেশ দেওয়া হয়, আমি মেনে নেব।”
এই নির্দেশ নিয়ে বিরোধী কাউন্সিলরদের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। বিজেপির সজল ঘোষ বলেন, “এই নিয়ম আসলে ভাষার নামে বিভাজনের রাজনীতি। মেয়র ইংরেজি জানেন না বলে কাউন্সিলরদের বাংলায় প্রশ্ন করতে বলা হচ্ছে!” সিপিআই ও সিপিএম কাউন্সিলররাও বলেন, “যখন আমরা পুরসভার (Kolkata Municipal Corporation) পরিষেবায় বাংলা ভাষা চালুর দাবি করেছিলাম, তখন যারা বিরোধিতা করেছিল, আজ তারা নিজেরাই বাংলার পক্ষে আওয়াজ তুলছে। তখন এই আওয়াজটা তুললে আজকের এই বিতর্ক হতো না।”
২৭ জুলাই থেকে রাজ্যজুড়ে ‘ভাষা আন্দোলন’-এর ডাক দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী
এই ভাষা বিতর্কের প্রেক্ষিতেই ভিনরাজ্যে বাংলা ভাষায় কথা বলায় বাঙালিদের হেনস্থা হওয়ার ঘটনার প্রেক্ষিতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ২৭ জুলাই থেকে রাজ্যজুড়ে ‘ভাষা আন্দোলন’-এর ডাক দিয়েছেন। সেই প্রেক্ষিতে এবার বড় সিদ্ধান্ত নিল কলকাতা পুরসভা (Kolkata Municipal Corporation)।
কলকাতা কর্পোরেশনের চেয়ারপার্সন মালা রায় জানিয়েছেন, এখন থেকে পুরসভায় কোনও কাউন্সিলর ইংরেজি বা হিন্দিতে প্রশ্ন করতে পারবেন না। সমস্ত প্রশ্ন করতে হবে বাংলায় এবং মেয়র পারিষদদেরও বাংলায় উত্তর দিতে হবে। তাঁর কথায়, “পুরসভার অধিবেশনে বাংলাকেই গুরুত্ব দিতে হবে। কিছু কাউন্সিলর এখনও হিন্দি বা ইংরেজিতে প্রশ্ন করেন, যা আর চলবে না। ইংরেজির নামে স্টাইল দেখানো বন্ধ হোক।” এই সিদ্ধান্তকে রাজনৈতিক বার্তা হিসেবেও দেখছে বিশেষজ্ঞ মহল। কারণ, তৃণমূল সম্প্রতি ‘ভাষা আন্দোলন’ শুরু করার কথা বলেছে এবং অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় সংসদে বাংলায় কথা বলার দাবি তুলেছেন।