শমীক ভট্টাচার্য
ছাব্বিশের বিধানসভা নির্বাচন পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি লড়বে শমীক ভট্টাচার্যের নেতৃত্বে। ইতিমধ্যেই নতুন বিজেপি রাজ্য সভাপতি হিসেবে শমীক ভট্টাচার্যের নাম উঠে এসেছে। বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার নতুন রাজ্য সভাপতিকে বরণ করা হবে।
১৯৭৪ সাল নাগাদ হাওড়ার মন্দিরতলা এলাকায় রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক (আরএসএস)-এর শাখায় যাতায়াত শুরু শমীকের। সঙ্ঘ পরিবারের সদস্য পরিচয় নিয়েই রাজনীতিতে যোগ। ২০০৬ সালে প্রথম বিজেপির টিকিটে শ্যামপুকুর বিধানসভা কেন্দ্র থেকে লড়ে হেরে যান। তথাগত সভাপতি থাকার সময় থেকেই শমীকের উত্থান শুরু। তখনই তিনি রাজ্যের সাধারণ সম্পাদক হন। রাহুল সভাপতি হওয়ার পরেও ওই পদে ছিলেন শমীক। দিলীপ রাজ্য সভাপতি হলে তিনি দলের প্রধান মুখপাত্র হন। কিন্তু তাঁর সেই স্তরের ‘গুরুত্ব’ ছিল না।
সঙ্ঘ পরিবারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার সূত্রে বিজেপির অন্দরে ‘ঘরের লোক’ বলে পরিচিত হলেও শমীক কেন দলে গুরুত্ব পাননি, তা নিয়ে অনেকেই কৌতূহলী ছিলেন। যার জবাবে বিজেপির অন্দরে কিছু ‘ব্যাখ্যা’ও শোনা যায়। যেমন অনেকের দাবি, শমীক দলে অন্তর্ঘাতের শিকার হয়েছিলেন। ২০১৪ সালের লোকসভা ভোটে বসিরহাট কেন্দ্রের প্রার্থী হয়ে হেরে যান শমীক। কিন্তু সেই বছরেই বসিরহাট দক্ষিণ কেন্দ্রে বিধানসভা উপনির্বাচনে অনেককে চমকে জিতেছিলেন তিনি। তখন দলের সভাপতি ছিলেন রাহুল। দলের একটি অংশের দাবি, শমীকের কার্যত ‘একক শক্তি’তে জয় দলের অন্দরে আলোড়ন তৈরি করেছিল। পদাধিকারীদের অনেকে ‘আশঙ্কিত’ হয়ে পড়েছিলেন। তার পর থেকেই শমীককে ‘কোণঠাসা’ করা শুরু হয়। কিন্তু এরপর নিজের নিষ্ঠা আর দলের প্রতি শমীকের একাগ্রতা তাঁর মান স্পষ্ট করেছে।
বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব সূত্রের খবর, আরও কয়েকটি কারণে শমীককে বেছে নেওয়া হল। প্রথমত, শমীক দলের ভিতরে-বাইরে ‘শহুরে শিক্ষিত মধ্যবিত্ত’ বলে পরিচিত। তাঁর এই পরিচিতিকে কলকাতা, রাজারহাট-সহ ‘বৃহত্তর কলকাতা’ বা দুর্গাপুরের মতো ‘বাঙালি ভদ্রলোক’ অধ্যুষিত এলাকায় কাজে লাগাতে চান বিজেপি নেতৃত্ব। দ্বিতীয়ত, এ রাজ্যে পদ্মশিবির যখন কোনও শক্তি হিসাবে গণ্য হত না, তখন থেকে এখনও পর্যন্ত একই ভাবে বিজেপির মুখপাত্র হিসাবে সংবাদমাধ্যমকে সামলেছেন দলের মধ্যে ‘বাগ্মী’ বলে পরিচিত শমীক। সূত্রের খবর, দলের প্রতি শমীকের আনুগত্য এর প্রধান কারণ। পাশাপাশি শমীকের নিপাট বাঙালি ভদ্রলোকের ভাবমূর্তিও এক্ষেত্রে ফ্যাক্টর বলে মনে করা হচ্ছে। বাংলা সাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্পর্কে তাঁর জ্ঞান এবং বাংলা বিজেপির তথাকথিত গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব থেকে তাঁর ভাবমূর্তি আলাদা। বিরোধীদলের নেতা হতে গেলে তাঁকে সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে সম্পর্ক রেখে চলতে হয়। তাদের কাছে গ্রহণযোগ্য হতে হয়। রাত-বিরেতে দরকারে দলের বক্তব্য জানাতে হয়। শমীকের সেই ‘গ্রহণযোগ্যতা’ রয়েছে।
গত বছর দলের প্রতি নিষ্ঠার ‘স্বীকৃতি’ পেয়েছেন তিনি। দল তাঁকে রাজ্যসভার সাংসদ করেছে। বছর ঘুরতে না ঘুরতেই ‘গুরুদায়িত্ব’! নীলবাড়ির লড়াইয়ে গোটা সংগঠনের ভার তাঁর উপর দিয়েছেন মোদী-শাহেরা। লড়াই কঠিন।