প্রত্যেক ভোটারের বাড়ি ৩ বার যাবেন বিএলওরা
মঙ্গলবার থেকে পশ্চিমবঙ্গ সহ ১২টি রাজ্যে শুরু হচ্ছে ভোটার তালিকা সংশোধনের দ্বিতীয় দফার বিশেষ নিবিড় সংশোধন (Special Intensive Revision বা SIR) প্রক্রিয়া। এই উদ্যোগের মাধ্যমে ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারির মধ্যে চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ করবে নির্বাচন কমিশন। সোমবার এক সাংবাদিক বৈঠকে মুখ্য নির্বাচন কমিশনার জ্ঞানেশ কুমার এই কর্মসূচির বিস্তারিত জানিয়েছেন।
বাড়ি বাড়ি যাচাই, ৩ দফা পরিদর্শন
এই SIR প্রক্রিয়ার মূল দায়িত্ব থাকবে বুথ লেভেল অফিসারদের (BLO) ওপর। তাঁরা প্রত্যেক ভোটারের বাড়িতে অন্তত তিন বার যাবেন—ভোটারের তথ্য যাচাই করতে গিয়ে তাঁরা বাড়িতে কাউকে না পেলে একটি নোটিস সেঁটে দিয়ে আসবেন। নতুন ভোটারদের ফর্ম ৬ ও ঘোষণা পত্র তাঁরা সরবরাহ করবেন। তারপর সেই সব তথ্য নির্বাচন নিবন্ধন আধিকারিকদের (ERO/AERO) কাছে জমা দেবেন। শহুরে এলাকার ভোটারদের ক্ষেত্রে অনলাইনে ফর্ম পূরণের সুযোগও থাকবে।
কমিশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, প্রবীণ নাগরিক, অসুস্থ ব্যক্তি, প্রতিবন্ধী, আর্থিকভাবে দুর্বল ও অন্যান্য ঝুঁকিপূর্ণ শ্রেণির ভোটারদের জন্য আলাদা স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগ করা হবে। যাতে কেউ হয়রানির শিকার না হন এবং সহজে ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হতে পারেন।
২৭ অক্টোবর থেকে প্রতিটি ভোটারের জন্য ইউনিক এনুমারেশন ফর্ম ছাপানো ও বিতরণ শুরু হয়েছে। বিএলও, ইআরও ও জেলা নির্বাচন আধিকারিকদের প্রশিক্ষণ শুরু হচ্ছে। রাজনৈতিক দলগুলির বুথ লেভেল এজেন্টরাও ফর্ম সংগ্রহ ও জমা দেওয়ার প্রক্রিয়ায় যুক্ত থাকবেন। প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে ভোটারের সংখ্যা সর্বাধিক ১,২০০ জনে সীমিত থাকবে। প্রয়োজনে নতুন বুথ গঠন করা হবে।
এই বিশেষ সংশোধন প্রক্রিয়া হবে আন্দামান ও নিকোবর, লাক্ষাদ্বীপ, ছত্তীসগড়, গোয়া, গুজরাট, কেরল, মধ্যপ্রদেশ, পুদুচেরি, রাজস্থান, তামিলনাড়ু, উত্তরপ্রদেশ ও পশ্চিমবঙ্গে। এর মধ্যে তামিলনাড়ু, পুদুচেরি, কেরল ও পশ্চিমবঙ্গে ২০২৬ সালে বিধানসভা নির্বাচন হওয়ার কথা।
কেন গুরুত্বপূর্ণ এই SIR
শেষবার SIR হয়েছিল ২০০২–০৪ সালে। এর পর থেকে ২১ বছরেরও বেশি সময় কেটে গেছে।
মাঝের সময়ে বহু মানুষ স্থানান্তরিত হয়েছেন, মৃত ভোটারদের নাম বাদ পড়েনি, কিছু ক্ষেত্রে বিদেশিদের নামও তালিকায় যুক্ত হয়েছে।
রাজনৈতিক দলগুলি বহুদিন ধরে ভোটার তালিকার মান নিয়ে প্রশ্ন তুলছে।
এই সব কারণেই নতুন করে তালিকা সংশোধনকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছে কমিশন
অভিযোগ ও আপিলের সুযোগ
যাঁদের নাম ভোটার তালিকায় মেলেনি বা বাদ পড়েছে, তাঁদের ক্ষেত্রে শুনানির মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নেবেন ইআরও ও এইআরও।
প্রথম আপিল জেলা শাসকের কাছে, দ্বিতীয় আপিল রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের কাছে করা যাবে।
প্রথম দফায় বিহারে এই SIR প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ হয়েছে এবং কমিশনের দাবি, সেখানে কোনও আপিল হয়নি—যা তারা ‘সফল মডেল’ হিসেবে দেখছে। দ্বিতীয় দফা শেষে ১২টি রাজ্যে সংশোধিত ভোটার তালিকা প্রকাশিত হবে ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে।