ঝাড়খণ্ড থেকে বিয়ে হয়ে আসা শবর মহিলাদের নথির মান্যতা দিচ্ছে না কমিশন, অথৈ জলে আদিম জনজাতি
শবর মহিলাদের নথির মান্যতা দিচ্ছে না কমিশন
এখনও সকলের আধার কার্ড নেই। ভোটার কার্ড না থাকার সংখ্যাটা এক হাজারেরও বেশি। তাদের বাবা-মা, এমনকি ঠাকুরদারও ২০০২-র ভোটার তালিকাতেও নাম নেই। নেই জাতিগত শংসাপত্র, ফরেস্ট রাইট সার্টিফিকেট। এমনকি নির্বাচন কমিশনের মান্যতা দেওয়া বাকি ৯ টি নথিপত্রও মিলছে না। যা মিলছে পাশবুকের প্রথম পৃষ্ঠা, জমির পড়চা। তা আবার ১৯৮৭ সালের আগের না হওয়ায় ওইসব নথিপত্র একের পর এক বাতিল করে দিচ্ছেন কমিশন নিযুক্ত বিএলও। ফলে এসআইআর অর্থাৎ নিবিড় ভোটার তালিকা সংশোধনের আবহে অথৈ জলে পড়েছে পুরুলিয়ার আদিম খেড়িয়া-শবর জনজাতি। একদিকে নিজেদের উদাসীনতা। সেই সঙ্গে এই জনজাতির সংখ্যাটা কম থাকায় তাদের নিয়ে খুব একটা মাথাব্যথা নেই রাজনৈতিক দলগুলির। তাহলে কি আদিম জনজাতি হয়েও গণতন্ত্রের লাইন দাঁড়ানোর অধিকার থাকবে না? বাংলায় এসআইআর শুরু হতেই এখন এই প্রশ্নই ঘুরপাক খাচ্ছে পুরুলিয়ার বনমহলে।আজও এই জনজাতি সম্পূর্ণভাবে সমাজের মূল স্রোতে ফেরেনি। শরীরে রোগ বাসা বাঁধলেও তাদের সামনে স্বাস্থ্য পরিষেবা না পৌঁছানো পর্যন্ত ঘরবন্দি হয়ে থেকে যান তারা। গণবন্টনের রেশন না মিললে জঙ্গলে গিয়ে আলুর মত বাঁওলা, এমনকি ইঁদুর, গো-সাপ শিকার করে পেট ভরান। ফলে তাদের কাছে আধার, ভোটার কার্ড তৈরি বিলাসিতা ছাড়া আর কিছুই নয়! আর তাই এখনও এই জনজাতির বেশকিছু মানুষজনের আধার কার্ড না হওয়ায় দিনের পর দিন সরকারি সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। আর এসআইআর-র কথা বললে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকেন তাঁরা। তবে এই এসআইআর-র কাজে যাদের ভোটার তালিকায় নাম রয়েছে তাদের এনুমারেশন ফর্ম পূরণ করতে হবে। এই বিষয়েও তাদের কোন কিছু জানা নেই। গত শনিবার দুপুরে এমনই একটি শবর টোলা বলরামপুরেরর হাড়জোড়া গ্রামে যান ওই এলাকার (২৩৯/১৭০) বিএলও চম্পকবরণ মাঝি। ওই টোলায় ৩২ টি শবর পরিবার রয়েছে।
ওই পরিবারের ১৪১ জন বাসিন্দার মধ্যে ভোটার ৭২ জন। তারমধ্যে অধিকাংশ জনেরই ২০২৫-র ভোটার তালিকায় নাম থাকলেও যে সকল মহিলারা বিয়ে হয়ে এই শবর টোলায় পা রেখেছেন তাদের ২০০২-র তালিকায় নাম নেই। বিশেষ করে যারা ঝাড়খণ্ড থেকে বিয়ে হয়ে এখানে এসেছেন সেই মহিলাদের প্রায় কারোরই ওই রাজ্যের বিধি অনুযায়ী ২০০৩ সালে তাদের নাম নেই। কেউ সেই সময় প্রাপ্তবয়স্ক হননি। আবার কেউ প্রাপ্তবয়স্ক হলেও স্রেফ উদাসীনতার জেরেই ভোটার তালিকায় নাম ওঠেনি। এমন কি তাদের বাবা-মা, ঠাকুরদার পর্যন্তও নাম নেই। বিএলও ওই গ্রামে এসে খাটিয়া পেতে এনুমারেশন ফর্ম বিলি করতে গিয়ে হতবাক।