কলকাতা হাইকোর্ট
সিউড়ি, আশিস মণ্ডল: বিজেপি শাসিত রাজ্যে সংখ্যালঘুরা বাংলা ভাষায় কথা বললেই অপরাধ। তাদের বাংলাদেশে পাঠানোর গভীর চক্রান্ত চালাচ্ছে বিজেপি পরিচালিত প্রশাসন। এক নাবালকসহ ৬ জন বীরভূমবাসিকে বাংলাদেশ পাঠানো নিয়ে এখন দিল্লির সরকার আদালতের প্রশ্নের মুখে।
সম্প্রতি, মুরারই ও পাইকর থেকে দুটি পরিবারকে বাংলাদেশ বর্ডারে পুশ ইন করা হয়েছে বলে পরিবারের তরফে অভিযোগ করা হয়। তারপরেই তাদের উদ্ধার করার উদ্দেশ্যে রাজ্য সরকারের তরফে কলকাতা উচ্চ আদালতে একটি হেবিয়াস কর্পাস মামলা দায়ের করা হয়। এক নাবালকসহ ৬ জন বীরভূমবাসিকে বাংলাদেশ পাঠানো নিয়ে এখন দিল্লির সরকার আদালতের প্রশ্নের মুখে। স্বশরীরে হাজিরার মাধ্যমে সেই প্রশ্নের উত্তর দিল্লি সরকারকে দিতে হবে। সর্বভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষে তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ সামিরুল ইসলাম এ বিষয়ে একটি টুইট করে বলেছেন বিজেপি শাসিত রাজ্য উড়িষ্যার পর দিল্লিতেও অগণতান্ত্রিক এবং বেআইনিভাবে ভারতীয়দের বাংলাদেশ পাঠানো হচ্ছে। কলকাতা উচ্চ আদালত এ ধরনের বেআইনি কাজের ব্যাপারে কঠোর অবস্থান গ্রহণ করে কৈফিয়ৎ তলব করেছে। মামলার শুনানিতে এই সমস্ত কড়া প্রশ্নের সম্মুখীন দিল্লির সরকারকে হতে হবে।
এদিকে জানা গেছে,২৬ জুন থেকে এই সমস্ত পরিবারের সদস্যদের মোবাইল বন্ধ থাকায় এবং তারা কোথায় আছে এসব জানতে না পারায় পরিবারের আত্মীয়রা খুবই চিন্তিত। তারা স্থানীয় প্রশাসন সহ সরকারের কাছেও আবেদন করেছেন। তাদের দাবি, কয়েক পুরুষ ধরে তারা বীরভূম তথা ভারতের বাসিন্দা, তাদের কাছে ভারতীয় নাগরিকত্বের সকল নথি আছে, তাই এই চক্রান্তকারীরা বর্ডারে পুশ ইনকে বেছে নিয়েছে। এর ফলে পরিবারের অর্ধেক মানুষ থেকে তারা বিচ্ছিন্ন হয়ে বাংলাদেশে ছিন্নমূল এবং অনধিকার প্রবেশকারী। মুরারইয়ের ভাদু সেখ নিজের ঘরে দুশ্চিন্তায় বিনিদ্র রাত কাটাচ্ছেন। তার মেয়ে, জামাই ও নাতিকে বাংলাদেশ পাঠানো হয়েছে বলে অভিযোগ। তাদের সঙ্গে পরিবারের কোনো যোগাযোগ নেই। অন্যদিকে, মুরারই থানার ভাদু সেখ ধীতোরা গ্রামের বাসিন্দা। তাঁর ছেলে দানিস শেখ (২৯), স্ত্রী সোনালী বিবি (২৬) ও পুত্র সাবির শেখ (৫), কোথায় আছেন তিনি জানেন না। তাঁর প্রশ্ন, নিজের দেশ ছেড়ে তাদেরকে অন্য দেশে পাঠানো হবে কেনো তা নিয়েই উঠছে প্রশ্ন। জানা গেছে, ২৬ জুন থেকে তাদের মোবাইল বন্ধ।
স্থানীয় প্রশাসন থেকে অর্থাৎ গ্রাম পঞ্চায়েত থেকে তাদের নাগরিকত্বর প্রামাণ্য নথি পাঠানো হয়েছে। সেই প্রামাণ্য চিঠির কোনো গুরুত্ব দিল্লী প্রশাসন দেয়নি। অভিযোগ, তারা কাউকে আটকানোর ঘটনা অস্বীকার করছেন। আর এখানেই সন্দেহ, তাহলে কী তাদের বাংলাদেশ পাচার করা হয়েছে? পাইকর থানা অবশ্য দিল্লি পুলিশ তরফে কোনো যোগাযোগের কথা অস্বীকার করছে। তবে মুরারই গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান নিতু রবিদাস জানান, পরিবারের তরফে খবর পেয়ে আমরা দিল্লি পুলিশের কাছে আমাদের এলাকার বাসিন্দা যাকে আটক করা হয়েছে এমন খবর পেয়ে একটি নাগরিকত্ব প্রমাণের চিঠি পাঠানো হয়। যদিও তার কোন উত্তর সেখান থেকে পাওয়া যায়নি। পরিযায়ী উন্নয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সামিরুল ইসলাম জানান আমরা আইন আদালতের উপর ভরসা করি আইনি পদক্ষেপের মাধ্যমেই দিল্লির সরকারকে বাধ্য করব ওই ছয় জন ভারতীয়কে বাংলাদেশ থেকে ফিরিয়ে আনতে।