বিস্ফোরক দাবি জনতা দলের নেতা ভোজেগৌড়ার
দিল্লিতে কুকুর কামড়ানোর ঘটনা ও জলাতঙ্কে মৃত্যু দিন দিন পাল্লা দিয়ে বাড়ছে। তাই দিল্লি-এনসিআর (নয়ডা, গাজিয়াবাদ, গুরুগ্রাম)-এর আবাসিক এলাকা থেকে অবিলম্বে সব রাস্তার কুকুরকে আশ্রয়কেন্দ্রে সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল দেশের শীর্ষ আদালত। এই নিয়েই তুঙ্গে বিতর্ক। সোশ্যাল মিডিয়া থেকে রাজনৈতিক ময়দান, খবরের চ্যানেলের প্রাইম টাইম থেকে সকলের স্টেটাস, চর্চার শেষ নেই। পশুপ্রেমীরা ক্ষিপ্ত, পোষ্য অভিভাবকরা তো রে রে করে তেড়ে আসে। এমন উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে বিস্ফোরক মন্তব্য করলেন কর্নাটকের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী এইচ ডি কুমারস্বামীর জনতা দল (সেকুলার)-এর এক নেতা।
তিনি প্রকাশ্যে জানালেন, শিশুদের নিরাপত্তার জন্য একসময়ে তিনি নিজেই প্রায় ২৮০০টি কুকুর মেরে ফেলেছিলেন। একইসঙ্গে সুপ্রিম কোর্টে গিয়ে গোটা রাজ্যে কুকুর সরানোর অনুমতি চাওয়ার পক্ষেও সওয়াল করেন তিনি।
কর্নাটকের বিধান পরিষদে মঙ্গলবার দলের এমএলসি এস এল ভোজেগৌড়া বলেন, 'প্রাণীদের জন্য আমাদের সহানুভূতি আছে। কিন্তু প্রাণীপ্রেমীরাও এখন এক ধরনের বিপদ হয়ে দাঁড়িয়েছেন। আপনারা দেখুন, ছোট ছোট বাচ্চাদের কীভাবে ভুগতে হচ্ছে। রোজ কাগজে, টিভিতে এসব খবর আসছে। প্রতিদিনই ঘটছে।'
এরপরই তিনি নিজের পুরনো অভিজ্ঞতার কথা শোনাতে গিয়ে বলেন, 'এক সময়ে চিকমাগলুর পৌরসভার প্রধান থাকার সময় মাংসে কিছু মিশিয়ে প্রায় ২৮০০টি কুকুরকে খাইয়ে মেরেছিলাম। তারপর নারকেল গাছের নীচে কবর দিয়েছিলাম। শিশুদের নিরাপত্তার জন্য লাগলে আবারও জেলে যেতেও রাজি আছি।'
গত এক দশকে দক্ষিণ ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে পথকুকুর গণহত্যার একাধিক ঘটনা প্রকাশ্যে এসেছে। সাম্প্রতিক সময়ে এই প্রসঙ্গ ফের সামনে এসেছে দিল্লি ও এনসিআর থেকে সব কুকুর সরিয়ে আশ্রয়কেন্দ্রে রাখার সুপ্রিম কোর্টের ওই নির্দেশকে ঘিরে। প্রাণী অধিকার কর্মীরা তীব্র আপত্তি তুলেছেন এই নির্দেশের বিরুদ্ধে।
কর্নাটক বিধানসভায়ও বিষয়টি উঠেছে সম্প্রতি বেঙ্গালুরুর দুই কলেজছাত্রী কুকুরের আক্রমণে গুরুতর জখম হওয়ার ঘটনায়। বেঙ্গালুরুর আম্বেদকর স্কুল অব ইকনমিকস ইউনিভার্সিটির এমএসসি বিভাগের দুই ছাত্রীকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়। গত মাসেই কর্নাটকের কোডিগেহাল্লিতে নিজের বাড়ির বাইরে পথ কুকুরের ঝাঁকের হামলায় মারা গিয়েছেন এক ৭০ বছরের বৃদ্ধ। এর আগেও পুরনো হুব্বলির শিমলা নগরে তিন বছরের এক কন্যাশিশুকে দল বেঁধে কামড়ায় কয়েকটি কুকুর। সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, কুকুরগুলি তার কাঁধ, পিঠ, পা ও হাতের একাধিক জায়গায় কামড়াচ্ছে, মাটিতে ফেলে টেনে নিয়ে যাচ্ছে। গুরুতর আহত শিশুটিকে তড়িঘড়ি ভর্তি করানো হয় কিমস হাসপাতালে।
এই পরিস্থিতিতে কর্নাটকের লোকায়ুক্ত বিচারপতি বি এস পাতিল বেঙ্গালুরুর সিটি কর্পোরেশন (বৃহৎ বেঙ্গালুরু মহানগর পালিকে বা বিএমপি)-কে কড়া ভাষায় তিরস্কার করেছেন। তাঁর অভিযোগ, আক্রমণাত্মক কুকুর রাখার জন্য পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র গড়ার নির্দেশ আগে দেওয়া হলেও তা কার্যকর করেনি বিএমপি।
এদিকে দিল্লি-এনসিআরের কুকুর সরানোর নির্দেশ নিয়ে তীব্র সমালোচনার মধ্যে মঙ্গলবার ভারতের প্রধান বিচারপতি বি আর গাভাই জানিয়েছেন, তিনি বিষয়টি খতিয়ে দেখবেন।