সনাতন ধর্ম ‘রক্ষার ডাক’, শুনানির মাঝেই প্রধান বিচারপতিকে জুতো ছুড়ে সাসপেন্ড আইনজীবী |
জীবন বাজি রেখে খাদ পেরিয়ে উত্তরবঙ্গের বন্যা বিধ্বস্ত গ্রামবাসীদের পাশে ডাক্তার ইরফান
উত্তরবঙ্গের বন্যা বিধ্বস্ত গ্রামবাসীদের পাশে ডাক্তার ইরফান
উত্তরবঙ্গজুড়ে ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতিতে (North Bengal Flood) যখন বহু এলাকা এখনও জলবন্দি ও যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন, তখন মানবিক উদ্যোগে অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ালেন প্রোগ্রেসিভ হেলথ অ্যাসোসিয়েশনের (PHA) স্টেট কমিটির সদস্য এবং নাগরাকাটার ব্লক মেডিক্যাল অফিসার (BMOH) ডা: মোল্লা ইরফান হোসেন। প্রশাসন ও এনডিআরএফ (NDRF)-এর সহযোগিতায় সোমবার তিনি পৌঁছে যান নাগরাকাটার বামনডাঙ্গা এলাকায়, যেখানে এখনও শতাধিক মানুষ জলের তোড়ে ঘরবন্দি হয়ে রয়েছেন এবং চিকিৎসা পরিষেবা কার্যত সম্পূর্ণ ভেঙে পড়েছে।
সূত্রের খবর, তাণ্ডু গ্রাম ও তার আশপাশের বিস্তীর্ণ অঞ্চল বন্যার (Flood) জলে ডুবে গেছে। ভেসে গেছে বেশ কয়েকটি রাস্তাঘাট, ভেঙে পড়েছে সেতু, বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন, আর মোবাইল নেটওয়ার্কও প্রায় বন্ধ। এমন দুর্বিষহ পরিস্থিতির মধ্যেই চিকিৎসক ইরফান স্থানীয় স্বাস্থ্যকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে একটি অস্থায়ী মেডিক্যাল ক্যাম্প গড়ে তোলার উদ্যোগ নিয়েছেন। সেখানে বন্যাদুর্গত মানুষদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়ার পাশাপাশি ডায়রিয়া, চর্মরোগ, সংক্রমণ এবং বন্যার পরবর্তী স্বাস্থ্যঝুঁকি প্রতিরোধে সচেতনতা বাড়ানোর কাজও চলছে জোরকদমে।
প্রোগ্রেসিভ হেলথ অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এই মুহূর্তে তাঁদের প্রধান লক্ষ্য বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে চিকিৎসা ও স্বাস্থ্য সহায়তা পৌঁছে দেওয়া। সংগঠনের অন্যান্য সদস্যরাও ইতিমধ্যেই উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন ব্লকে স্বেচ্ছাসেবী মেডিক্যাল ক্যাম্প শুরু করার উদ্যোগ নিয়েছেন।
জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চিকিৎসকের ঝুলে ঝুলে বিধ্বস্ত অঞ্চলে পৌঁছে যাওয়ার ভিডিও ভাইরাল হতেই প্রশংসা করেছেন তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষ (Kunal Ghosh)। ফেসবুকে তিনি লিখেছেন, "দড়িতে ঝুলে দুর্গত এলাকায় যাচ্ছেন আলিপুরদুয়ারের নাগরাকাটার ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক ডাঃ ইরফান মোল্লা। তিনি প্রোগ্রেসিভ হেলথ অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য। ঝুঁকি নিয়েও গেলেন, কারণ ওদিকে আটকে পড়া মানুষের চিকিৎসা দরকার। কিন্তু, দুর্ভাগ্যের, চিকিৎসকের এমন ভূমিকা অধিকাংশ চ্যানেল, কাগজ, ইউটিউব চ্যানেলে জায়গা পেল না। নাটুকে বিপ্লবী বিকৃত বিচিত্রবীর্যদের শিবিরের কেউ করলে তা নিয়ে খবর চলত 'ব্রেকিং' দিয়ে। এটাই এখন বাংলার একাংশের মিডিয়া, সোশ্যাল মিডিয়ার প্রবণতা। কাউকে গ্রামের দিকে পোস্টিং দিলে কোর্টে গিয়ে খবর হয়; কেউ গ্রামে দুর্যোগের পর দড়িতে ঝুলে দিয়ে সেবার কর্তব্য পালন করে। তফাৎটা চোখে দেখা যাচ্ছে। Progressive Health Association এবং Junior Doctors Association-কে অভিনন্দন। এই ছবিটা দায়বদ্ধতার প্রতীক হয়ে থাক। জয় বাংলা।"
স্থানীয় প্রশাসন সূত্রে খবর, এনডিআরএফ ও স্বাস্থ্য দফতরের যৌথ উদ্যোগে আগামী কয়েক দিনে আরও কয়েকটি বন্যাদুর্গত এলাকায় অনুরূপ মেডিক্যাল ক্যাম্প চালু করা হবে। নাগরাকাটা, বীরপাড়া, মাদারিহাট এবং গজলডোবা-সহ একাধিক অঞ্চলে ইতিমধ্যেই মেডিক্যাল টিম পাঠানো হয়েছে। প্রশাসনের লক্ষ্য, দুর্গত প্রতিটি এলাকায় অন্তত প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরিষেবা ও ওষুধ পৌঁছে দেওয়া, যতক্ষণ না পরিস্থিতি পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়।