বিষ্ণুপুরের মল্লরাজদের হাজার বছরের দুর্গাপুজো
পরপর তিনটি তোপধ্বনি। কেঁপে উঠল মল্লগড়ের মাটি। কিছুক্ষণ বিরাম। ফের তিনটি তোপের শব্দ। মৃন্ময়ী মন্দির চত্বরে প্রবেশ করলেন বড় ঠাকুরানি বা মহাকালী। তাঁকে বরণ করলেন রাজ পরিবারের বধূরা। আবারও কামান থেকে ছুটল তোপ। মন্দিরে প্রবেশ করলেন বড় ঠাকুরানি। ৯টি তোপধ্বনির মাধ্যমে শুরু হল বাংলার আদি দুর্গাপুজো। দেবীর বোধনের বাকি এখনও দিন বারো। তবে প্রাচীন রীতি মেনে আজ, মঙ্গলবার থেকে শুরু হয়ে গেল মল্লরাজদের ১০২৯ বছরের পুজো।
এদিন কৃষ্ণা নবমী তিথিতে গোপালসায়রে স্নানপর্ব সেরে মন্দিরে আনা হল বড় ঠাকুরানি অর্থাৎ মহাকালীকে। দেবীপক্ষের চতুর্থী তিথিতে মন্দিরে আসবেন মেজ ঠাকুরানি অর্থাৎ মহালক্ষ্মী। সপ্তমীর দিন মন্দিরে আসবেন ছোট ঠাকুরানি অর্থাৎ দেবী মহাসরস্বতী। তবে এই তিন দেবী মূর্তিতে নয়, পূজিত হন পটে। স্থানীয় ফৌজদার পরিবারের হাতে আঁকা সেই তিনটি পট। এদিকে গঙ্গামাটি দিয়ে নির্মিত মা মৃন্ময়ী সারা বছরই পূজিত হন। আজ থেকে আগামী পনেরো দিন নিরামিষ আহার গ্রহণ করবেন রাজপরিবারের সদস্যরা।
৯৯৭ খ্রীস্টাব্দ। ১৯তম মল্লরাজা জগৎ মল্লের হাত ধরে শুরু পুজো। পুজো শুরুর আগে মল্লরাজাদের রাজধানী ছিল জয়পুরের প্রদ্যুম্নপুর এলাকায়। কথিত আছে, একদিন জগৎমল্ল শিকারে গিয়ে পথ হারিয়ে ফেলেন। ক্লান্ত রাজা এক বটগাছের তলায় বসে পড়েন। পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, সেখানেই নানা অলৌকিক ঘটনা ঘটে রাজা জগৎমল্লের সঙ্গে। পরবর্তীতে ওই বটগাছের নিচে দেবী মৃন্ময়ীর মন্দির স্থাপন করার দৈববাণী পান তিনি। এরপর রাজধানী সরিয়ে আনা হয় বিষ্ণুপুরে। তারপর হাজার বছর ধরে বহু ইতিহাসের সাক্ষী মল্লরাজদের কূলদেবী মৃন্ময়ী। দেবীর মূর্তির পাশাপাশি, পটচিত্র তৈরিরও নির্দেশ ছিল। সেই মোতাবেক ফৌজদাররা সেই পটচিত্র তৈরির দায়িত্ব পান। মল্লরাজারা বৈষ্ণব ধর্মে দীক্ষিত হলে শব্দকে ব্রহ্মজ্ঞান করে তোপধ্বনির প্রচলন শুরু হয়। সেই প্রথা আজও চলে আসছে । পুজোর প্রতিটি নির্ঘণ্ট আজও ঘোষিত হয় তোপধ্বনির মাধ্যমেই।