বর্ধমানের এই গ্রামে কেউ কালীর ছবি রাখেন না
এই গ্রামে মা কালী আছেন, কিন্তু তাঁকে কেউ বাড়িতে রাখেন না! না মূর্তি, না ছবি, এমনকি ফোনের গ্যালারিতেও নেই দেবীর ছবি। তবু এখানকার প্রতিটি মানুষ বিশ্বাস করে— “মা সিদ্ধেশ্বরী তাঁদের আগলে রেখেছেন।”
পূর্ব বর্ধমানের কোলসরা গ্রাম, যেখানে মা সিদ্ধেশ্বরীকে নিয়ে রয়েছে রহস্যময় ভক্তি। প্রায় চারশো পঞ্চাশ বছর আগে, শেরশাহের আমলে এই গ্রামের এক সাধারণ মানুষ দিগম্বর ঘোষাল স্বপ্নে পান দেবীর আদেশ। তারপরেই এখানে দেবীকে প্রতিষ্ঠা করেন তিনি। আজও যার অলৌকিক মাহাত্ম্যের কথা শুনে শিহরিত হন অনেকে।
কোলসরা গ্রামে রয়েছে মাত্র একটি কালীমন্দির— সেই সিদ্ধেশ্বরী মায়ের। এই মন্দির ছাড়া আর কোনও বাড়িতে কালীপুজো হয় না। আশ্চর্যের বিষয়, গ্রামবাসীরা মা কালীর ছবি পর্যন্ত ঘরে রাখেন না। এমনকি যেসব ক্যালেন্ডারে মা কালীর ছবি ছাপা থাকে, সেগুলোও ঘরে তোলা হয় না। গ্রামের কারও মোবাইল ফোনেও নেই মা কালীর ছবি। কেউ মা কালী সেজে গ্রামে প্রবেশ করলেও নাকি অঘটন ঘটে! তাই কেউ সাহসও করে না।
সিদ্ধেশ্বরী মায়ের পুজোর নিয়মও ব্যতিক্রমী। পুজোর সময় কোনও মহিলা মন্দিরে প্রবেশ করতে পারেন না। মন্দিরের অন্তঃপুরে বন্ধ ঘরে ব্রাহ্মণ বংশের পুরুষরাই মায়ের মূর্তি নির্মাণ করেন ও পুজো করেন। এটি বহু প্রাচীন প্রথা, যা এখনও বদলায়নি। পুজোর পরে প্রতিমা নিরঞ্জনও হয় সবার অলক্ষ্যে। ভক্তদের বিশ্বাস, দেবী খালি হাতে কাউকে ফেরান না। দূরদূরান্ত থেকে ভক্তরা আসেন মাকে দর্শন করতে। দূর থেকে মাথা নোয়ান তাঁরা। পুজো, পার্বণ, বিয়ে বা যে কোনও সামাজিক অনুষ্ঠান— সবকিছুরই শুরু হয় মায়ের নাম নিয়ে। আজও কালীপুজোর রাতে প্রদীপের আলোয় পূজিতা হন দেবী। লোকচক্ষুর আড়ালে থেকেই সর্বত্র তাঁর উপস্থিতি।