অমিত শাহকে ফোন করে রিপোর্ট নিলেন মোদী, ঘটনার তদন্তভার পেল এনআইএ |
তিরুপতির লাড্ডুতে ভেজাল ঘি কাণ্ডে নয়া মোড়! তদন্তে উঠে এল নগদ ৫০ লক্ষ ঘুষ লেনদেনের প্রমাণ
তিরুপতির লাড্ডুতে ভেজাল ঘি কাণ্ডে নয়া মোড়
গত বছরই অভিযোগ উঠেছিল তিরুপতির লাড্ডুতে মেশানো হচ্ছে ভেজাল ঘি (Tirupati laddu scam)! এবার সেই ভেজাল ঘি (Tirupati laddu adulterated ghee) কেলেঙ্কারিতেই উঠে এল ৫০ লক্ষ টাকার ঘুষ লেনদেনের (Bribe in Tirupati laddu adulterated ghee scam) চাঞ্চল্যকর তথ্য।
তদন্তে জানা গিয়েছে, এই অর্থ লেনদেনের সূত্র মিলেছে তিরুমলা তিরুপতি দেবস্থানম (TTD)-এ দেওয়া ঘি সরবরাহ ঘিরে হওয়া দুর্নীতির মামলায়। প্রতি বছর লক্ষ লক্ষ ভক্ত, পর্যটক ও দর্শনার্থীদের জন্য যে ‘শ্রীভরি লাড্ডু’ (Srivari laddu) প্রস্তুত হয়, সেই প্রসাদ তৈরিতেই ব্যবহার করা হচ্ছিল ভেজাল ঘি।
সূত্রের দাবি, অন্ধ্রপ্রদেশের ক্ষমতাসীন ওয়াইএসআর কংগ্রেস পার্টির সাংসদ ও প্রাক্তন TTD চেয়ারম্যান ওয়াইভি সুব্বা রেড্ডির ব্যক্তিগত সহকারী কে চিন্নাপ্পানার হাতে পৌঁছেছিল ওই বিপুল টাকা। অভিযোগ, উত্তরপ্রদেশের প্রিমিয়ার অ্যাগ্রি ফুডস প্রাইভেট লিমিটেডের সঙ্গে যুক্ত হাওয়ালা এজেন্টদের মাধ্যমেই তার কাছে পৌঁছয় নগদ ৫০ লক্ষ টাকা।
দিল্লিতে লেনদেন, নগদে পৌঁছয় ঘুষের টাকা
তদন্তকারীদের সূত্রে খবর, দিল্লির প্যাটেল নগর মেট্রো স্টেশনের কাছেই এই লেনদেন হয়। চিন্নাপ্পানার হাতে প্রথমে দিল্লি-ভিত্তিক হাওয়ালা এজেন্ট আমন গুপ্তা ২০ লক্ষ টাকা দেয়, বাকিটা পৌঁছয় প্রিমিয়ার অ্যাগ্রি ফুডসের সিনিয়র এক্সিকিউটিভ বিজয় গুপ্তার কাছ থেকে। সব মিলিয়ে নগদ ৫০ লক্ষ টাকা ঘুরেছে ভেজাল ঘি কেলেঙ্কারির পেছনে।
ভেজাল ঘি কাণ্ডে নড়েচড়ে বসেছিল রাজনৈতিক মহল
গত বছর থেকেই অন্ধ্রপ্রদেশে তিরুপতি লাড্ডুর ঘি নিয়ে শুরু হয়েছিল তীব্র বিতর্ক। অভিযোগ ওঠে, ওই ঘি-তে মেশানো হচ্ছে পশুর চর্বি, অর্থাৎ ‘অশুদ্ধ’ ঘি দিয়ে প্রস্তুত হচ্ছে দেবতার প্রসাদ!
রাজনৈতিক থেকে সাংস্কৃতিক, সব মহলেই ঝড় ওঠে। মুখ্যমন্ত্রী চন্দ্রবাবু নাইডু পর্যন্ত প্রকাশ্যে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তবে সুপ্রিম কোর্ট পরে জানায়, ধর্ম আর রাজনীতিকে একসঙ্গে না মেশানোই শ্রেয়। তবু আদালত নির্দেশ দেয়, বিষয়টি নিয়ে যৌথ তদন্ত শুরু হোক - যেখানে থাকবেন সিবিআই, রাজ্য পুলিশের অফিসার ও খাদ্যদফতরের বিশেষজ্ঞরা।
তদন্তে বেরিয়ে আসে ভয়াবহ তথ্য
যৌথ তদন্তে প্রকাশ্যে আসে, ঘি সরবরাহকারী চারটি সংস্থা দরপত্র জিততে ও লাভ বাড়াতে খাতায় কলমে কারচুপি করেছে। তদন্তে দেখা গিয়েছে, প্রায় ৬০.৩৭ লক্ষ কিলোগ্রাম ভেজাল ঘি, অর্থাৎ বিদেশি উপাদান মেশানো ঘি, মূল্য প্রায় ২৪০.৮ কোটি টাকা, TTD-র কাছে পৌঁছেছিল!
সবচেয়ে বড় অভিযুক্ত ‘ভোলে বাবা অর্গানিক ডেয়ারি মিল্ক প্রাইভেট লিমিটেড’, রূড়কির কারখানায় তারা পাম অয়েল ও রাসায়নিক মিশিয়ে ঘি তৈরি করত। এরপর সেই ভেজাল ঘি পৌঁছত মন্দিরে অন্য তিন সংস্থার মাধ্যমে।
তথ্য বলছে,
- শ্রী বৈষ্ণবী ডেয়ারি স্পেশ্যালিটিজ সরবরাহ করেছে ১৩৩.১২ কোটি টাকার ভেজাল ঘি।
- মালগঙ্গা মিল্ক অ্যান্ড অ্যাগ্রো প্রোডাক্টস ৭৩.১৮ কোটি টাকার।
- আর এআর ডেয়ারি ফুডস দিয়েছে ১.৬১ কোটি টাকার ঘি।
সবচেয়ে বিস্ময়কর বিষয়, মাইসুরুর সেন্ট্রাল ফুড টেকনোলজিকাল রিসার্চ ইনস্টিটিউট ২০২২ সালেই রিপোর্টে জানায় যে ঘি-তে ভেজাল রয়েছে, তবুও ২০২৪ পর্যন্ত সরবরাহ চলত। এতে প্রশাসনিক গাফিলতি ও সম্ভাব্য যোগসাজশের অভিযোগ আরও জোরদার হয়েছে।
গুজরাতের ল্যাবে ধরা পড়ল পশু চর্বির প্রমাণ
তামিলনাড়ুর দিন্ডিগুলের এক সরবরাহকারীর (পরে জানা যায়, তা এআর ডেয়ারি) পাঠানো ঘি-র নমুনা গুজরাটের এক ল্যাবে পরীক্ষা করানো হয়। সেখানে ধরা পড়ে মাছের তেল, গরুর চর্বি (বিফ ট্যালো) ও লার্ডের চিহ্ন - যা সরাসরি পশু-জাত চর্বি।
যদিও ল্যাব রিপোর্টে একটি ‘ফলস পজিটিভ’ সংক্রান্ত সতর্কতাও যোগ করা ছিল।
প্রতিদিন তিন লক্ষ লাড্ডুর প্রস্তুতি
তিরুপতি মন্দিরের রান্নাঘরে প্রতিদিন তৈরি হয় প্রায় তিন লক্ষ লাড্ডু। তার জন্য লাগে প্রায় ১,৫০০ কেজি ঘি, সঙ্গে বাদাম, কিশমিশ, এলাচ, বেসন ও প্রচুর পরিমাণে চিনি। এখন প্রশ্ন, এত বড় আকারে উৎপাদনের ঘি সরবরাহে এতদিন ধরে ভেজালের এই কারবার চলল কীভাবে?