মাটির ভিতর ‘পোঁতা’ ১ লক্ষ ৪০ হাজার কোটির সম্পত্তি
আধুনিক দুনিয়ায় এর চাহিদা এক্কেবারে তুঙ্গে। মুখিয়ে থাকে গোটা বিশ্বের কমবেশি প্রায় সব দেশই। কিন্তু এর সিংহভাগই নাকি নিয়ে বসে আছে চিন। মানে বিশ্বের প্রায় অর্ধেকের কাছাকাছিই নাকি ওদের কাছে। সোজা কথায় এ এমন এক জিনিস যা ছা়ড়া আধুনিক বিশ্বে চলাই মুশকিল। কিন্তু, এই বাংলার বুকেই সেই বিরল রত্ন। তাও আবার লাল মাটির দেশ পুরুলিয়ায়। তা নিয়েই সাম্প্রতিককালে জোর চর্চা শুরু হয়েছে। রাজনৈতিক মহলেও চলছে চাপানউতোর। শুরু হয়ে গিয়েছে কেন্দ্র-রাজ্য টানাপোড়েনও। কী এই বিরল রত্ন? কেন এত টানাপোড়েন।
পুরুলিয়ার কালাপাথর-রঘুডিহি ব্লকে ৬.৭ লক্ষ মেট্রিক টন রেয়ার আর্থ এলিমেন্টের খোঁজ মিলেছে বলে জানা যাচ্ছে। যার আনুমানিক মূল ১ লক্ষ ৪০ হাজার কোটি টাকা। বহু বছর আগেই উত্তর ২৪ পরগনার অশোক নগরে গ্যাসের ভাণ্ডার খুঁজে পেয়েছিল ONGC। রাজ্য সরকার প্রয়োজনীয় লিজ বা ইজারা না দেওয়ায় গ্যাস উত্তোলন থমকে যায়। এ নিয়ে টানাপোড়েন কম হয়নি। অশোকনগরে মাটির নীচে খনিজ তেল ও গ্যাসের ভাণ্ডারের খোঁজ পাওয়া গিয়েছিল অনেকদিন আগেই। ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর মাসে সেখান থেকে তেল উত্তোলন শুরু করার জন্য অনুমতি চেয়ে কেন্দ্রের কাছে আবেদন করে তেল উত্তোলক সংস্থা ওএনজিসি। সে বছরের অক্টোবরেই রাজ্যকে চিঠি পাঠিয়ে কেন্দ্র ‘ইজারা’ বা ‘পিএমএল’ দেওয়ার সুপারিশ করে। কিন্তু রাজ্য সরকার ‘পিএমএল’ দেয়নি বলে অভিযোগ ওঠে। পরবর্তীতে ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে এবং ২০২৪ সালের জানুয়ারি মাসে আরও দু’টি চিঠি রাজ্যকে পাঠানো হয়। তাতেও কাজ হয়নি। ২০২৪ সালের জুলাই মাসে পূর্বাঞ্চলীয় পরিষদের বৈঠকে ফের রাজ্যকে এই অনুমতি বা ‘ইজারা’ দিয়ে দিতে বলা হয়। শেষ পর্যন্ত ওএনজিসি সেই ‘ইজারা’র চিঠি পায় ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে। কেন্দ্রের তরফে সংসদেই এটা জানানো হয়। এদিকে প্রথম চার বছরে ওই খনি থেকে ১৮,২৭৪ কিউবিক মিটার খনিজ তেল তোলার পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু রাজ্যের অনুমতি মিলতে দেরি হওয়ায় তা করা যায়নি। এবার তেল তোলা শুরু হবে বলে জানানো হয়েছে খনিজ তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাস মন্ত্রকের তরফে। এবার পুরুলিয়াতেও উঠেছে একই ধরনের অভিযোগ। কিন্তু তার আগে জেনে নেওয়া যাক রেয়ার আর্থ এলিমেন্ট কেন এত গুরুত্বপূর্ণ।
রেরার আর্থ এলিমেন্ট অর্থাৎ বিরল মৃত্তিকা মৌল, বিশ্বে যার বড় অংশের ভাণ্ডার রয়েছে চিনে। মার্কিন মুলুকে যেটুকু ভাণ্ডার রয়েছে তা আমেরিকার চলে না। অত্যাধুনিক বিশ্বে এই খনিজ ছাড়া এতটুকু এগোনোর উপায় নেই। এর মধ্যে রয়েছে ১৭টি বিশেষ মৌল, যার মধ্যে ১৫টিকে একসঙ্গে ল্যান্থানাউস বলা হয়। এই মৌলের খোঁজ পৃথিবীকে রঙিন টিভি দেখার সুযোগ করে দিয়েছিল। এখন মোবাইল থেকে ল্যাপটপ, যাবতীয় ইলেকট্রনিক্স, ইলেকট্রিকে চলা গাড়ি, যুদ্ধবিমান, নিউক্লিয়ার সাবমেরিন, সাধারণ বিমানের ইঞ্জিন, জলবিদ্যুৎ উৎপাদনকারী টারবাইন সবেতেই এই মৌল লাগে। তাই চিনের বাড়বাড়ন্ত। আমেরিকা শুল্কের ভয় দেখালেই চিন রেয়ার আর্থ এলিমেন্টের রফতানি বন্ধের জুজু দেখায়। এবার এমন দামি জিনিসের খোঁজ মিলেছে ভারতেও। কেন্দ্রীয় কয়লামন্ত্রী জানিয়েছেন অন্ধ্র প্রদেশ, ওড়িশা তামিলনাড়ু, কেরল, ঝাড়খণ্ড, মহারাষ্ট্র, গুজরাটের সঙ্গে তালিকায় নাম রয়েছে পশ্চিমবঙ্গেরও। গোটা দেশে পরিমাণ প্রায় ৮.৫২ মিলিয়ন টন। ইতিমধ্যেই পুরুলিয়াতে খোঁড়াখুঁড়ি করেছে জিএসআই।