ঠেকে শেখা মোদী এবার অনেক কৌশলী
একুশের ভোটে বাংলায় নরেন্দ্র মোদীর প্রচারের কথা মনে পড়ে? শুরুটাই করতেন ‘দিদি… ও দিদি’ দিয়ে। চার বছর পর ফের আর একটি ভোট আসছে। তার আগে দুর্গাপুরে সভা করতে এসে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম পর্যন্ত মুখে আনলেন না প্রধানমন্ত্রী। বরং প্রতিষ্ঠান বিরোধী হাওয়ায় জর্জর শাসক দলকে পরাস্ত করতে বিকল্প উন্নয়নের মডেল দেখাতে চাইলেন তিনি। তাঁর প্রচারের বারো আনা জুড়ে রইল উন্নয়নের বিষয়আশয়। প্রধানমন্ত্রী বোঝাতে চাইলেন, বাংলায় তৃণমূল যতদিন থাকবে কোনও উন্নয়ন হবে না। তোলাবাজি, গুণ্ডাট্যাক্স, তৃণমূলের হুমকির মুখে কোনও শিল্প আসবে না। আসার কথাও নয়। তাই বাংলায় উন্নয়নের পূর্বশর্তই হল, আগে তৃণমূলের বিদায়। তার পর বাংলার উন্নয়ন মোদীর গ্যারান্টি।
এদিন তাঁর দীবক্তৃতার মধ্যে এক সময়ে প্রধানমন্ত্রী স্পষ্ট বাংলাতেই বলেন, “তৃণমূল যাবে তবেই বাংলায় আসল পরিবর্তন হবে।" সেই সঙ্গে বলেন, “বিকশিত বাংলা মোদীর গ্যারান্টি। বিকশিত বাংলার বিজেপির সঙ্কল্প।"
বিজেপি শাসিত কিছু রাজ্যে বাঙালিদের আক্রান্ত হওয়ার ঘটনাকে এখন ইস্যু করেছে তৃণমূল। প্রতিবাদে রাস্তায় নেমেছে। এহেন পরিস্থিতিতে বাঙালি ভাবাবেগ নিয়ে এদিন বিজেপিও ছিল যত্নশীল। কিছু প্রতীকী আয়োজনও ছিল মোদীর দুর্গাপুরের সভায়। যেমন তাঁকে রজনীগন্ধা ফুলের মালায় বরণ করা হয়। তাঁকে উপহার দেওয়া হয় মা দুর্গার মূর্তি। প্রধানমন্ত্রী তাঁর বক্তৃতাও শুরু করেন ‘জয় মা কালী’ ধ্বনি তুলে।
তার পর ক্ষুরধার স্বরে মোদী বলেন, “তৃণমূল তো বাংলার পরিচয়টাকেই সঙ্কটে ফেলে দিয়েছে। দেদার অনুপ্রবেশ ঘটছে। আর তাদের ভুয়ো পরিচয়পত্র ধরিয়ে দিচ্ছে তৃণমূল সরকার। তুষ্টিকরণের সমস্ত সীমা অতিক্রম করে গেছে তৃণমূল।" এরপরই অবশ্য চোয়াল শক্ত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “যারা ভারতের নাগরিক নয়, যারা অনুপ্রবেশকারী, তাদের বিরুদ্ধে আইনত ব্যবস্থা হবে। এও মোদীর গ্যারান্টি।"
পর্যবেক্ষকদের অনেকের মতে, বাংলায় প্রচারের ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী এ বার দৃশ্যতই অনেক কৌশলী। তিনি বুঝতে পারছেন, দিদি ও দিদি বলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে কটাক্ষ করলে মুখ্যমন্ত্রী উল্টে সহানুভূতি পেয়ে যাবেন। বক্তৃতায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম মুখে আনলেও তাঁকেই প্রাসঙ্গিক করে দেওয়া হবে। সেই সব বিষয় তিনি তুলে এনেছেন, যা নিয়ে বাংলায় বিপুল সংখ্যক মানুষের সরকারের বিরুদ্ধে অসন্তোষ রয়েছে। আবার সেই সব কথাও তুলে এনেছেন যা নিয়ে বাংলায় পরম ক্ষুধা রয়েছে— যেমন কর্মসংস্থানের সুযোগ, শিল্পায়ন ও উন্নয়ন।