চিনুন বিহারের ‘মাশরুম লেডি’কে
বিহারের (Bihar) মুঙ্গের জেলার এক প্রত্যন্ত গ্রাম। চার সন্তানকে নিয়ে চরম দারিদ্র্যের সঙ্গে লড়াই করতেন এক গৃহবধূ। জমি নেই, চাষের পুঁজি নেই, কখনও কখনও চুলায় আগুন ধরানোই ছিল দুর্লভ। সেই আঁধারেই আলো খুঁজে পান বিনা দেবী। নিজের খাটের তলায় মাশরুম চাষ (Mushroom) শুরু করেছিলেন তিনি। সেখান থেকেই তৈরি হয়েছে এক অন্যরকম বিপ্লব।
আজ গোটা দেশ তাঁকে চেনে ‘মাশরুম লেডি’ (Mushroom Lady) নামে। এক সময়ের অভাবী গৃহবধূ এখন গ্রামীণ মহিলাদের কাছে আত্মনির্ভরতার প্রতীক।
খাটের তলা থেকে শুরু
তিলকারি গ্রামের বাসিন্দা বিনা দেবীর (Bina Devi) স্বামী ছিলেন এক সাধারণ গ্রামীণ ডাক্তার। সংসারের আয় ছিল সীমিত। সন্তানদের পড়াশোনা চালানোই ছিল বড় চ্যালেঞ্জ। জমি না থাকায় চাষবাসও সম্ভব ছিল না। তখনই বিনা ঠিক করেন নতুন পথ বেছে নেবেন। মাশরুম চাষের জন্য বড় মাঠ বা বিশাল পুঁজির প্রয়োজন হয় না। তাই এক কেজি বীজ কিনে খাটের তলায় শুরু করেন পরীক্ষামূলক চাষ।
সংগ্রাম ও সাফল্য
প্রথম দিকে ফলন ভাল হয়নি। তবু হাল ছাড়েননি বিনা। পরে ভাগলপুরের সাবৌরের কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রশিক্ষণ নিয়ে ধীরে ধীরে বাড়ান উৎপাদন। বাজারে মাশরুমের চাহিদা বাড়তে থাকায় এক সময় তাঁর আয় কয়েক লক্ষ টাকায় পৌঁছে যায়। সংসারের অভাব ঘোচে। ফলত ছেলে-মেয়েরা পায় ভাল শিক্ষা। বড় ছেলে বর্তমানে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ছেন।
মহিলাদের ক্ষমতায়ন
শুধু নিজের সাফল্যে থেমে থাকেননি বিনা। একে একে কাজ শেখাতে শুরু করেন গ্রামের মহিলাদের। আজ শতাধিক গ্রামে ছড়িয়ে পড়েছে তাঁর মাশরুম বিপ্লব। প্রায় ৭০ হাজার মহিলা (70 Thousand Women) আর্থিকভাবে স্বনির্ভর হচ্ছেন তাঁর হাত ধরে। বিনার কথায়, “মহিলারা অর্থনৈতিকভাবে স্বাধীন হলে তাঁদের সম্মানও বাড়ে, আত্মবিশ্বাসও বাড়ে।”
জাতীয় স্বীকৃতি
২০১৪ সালে তাঁকে সম্মানিত করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার (Nitish Kumar)। এরপর পান উইমেন ফার্মার অ্যাওয়ার্ড (Women Farmer Award) (২০১৮), কিষাণ অভিনব পুরস্কার (২০১৯)। আন্তর্জাতিক নারী দিবসে ২০২০ সালে রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দের (Ramnath Kovind) হাত থেকেও সম্মান পান তিনি। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও (Narendra Modi) ‘মন কি বাত’-এ তাঁর গল্প তুলে ধরেন।
নতুন পথে হাঁটা
শুধু মাশরুম চাষ নয়, এখন তিনি জৈব কৃষির প্রবক্তা। রাসায়নিক সারের বদলে স্বাস্থ্যকর ও পরিবেশবান্ধব কৃষিকাজের প্রচার করছেন। তাঁর উদ্যোগে ইতিমধ্যেই ৬০ থেকে ৭০ হাজার মহিলা আর্থিক স্বাধীনতা অর্জন করেছেন।
তবু আক্ষেপ রয়ে গিয়েছে। বিনা দেবীর (Bina Devi) দাবি, সরকারিভাবে তিনি এখনও কোনও সাহায্য পাননি। “আমি চাই সরকার সরাসরি আমাদের পাশে দাঁড়াক। কর্মসংস্থানমূলক প্রকল্পে মহিলাদের সুযোগ করে দিক,” বলছেন তিনি।
দারিদ্র্য থেকে আলোয়
খাটের তলা থেকে যে যাত্রা শুরু হয়েছিল তা জাতীয় মঞ্চে পৌঁছে গেছে। বিনা দেবীর গল্প শুধু সাফল্যের নয়, গ্রামীণ মহিলাদের আত্মমর্যাদার প্রতীকও বটে। এক মহিলার দৃঢ় সংকল্প কীভাবে হাজারো জীবনের রূপরেখা বদলে দিতে পারে - সেটাই প্রমাণ করেছেন মুঙ্গেরের এই ‘মাশরুম লেডি’।