কৃষ্ণনগরেই প্রথম জগদ্ধাত্রীর আরাধনা
কলকাতার যেমন দুর্গাপুজো (Durga Puja), বারাসতের যেমন কালীপুজো (Kali Puja), তেমনই জগদ্ধাত্রী পুজো (Jagadhatri Puja) মানেই চন্দননগর। শহরের আলোকসজ্জা, জাঁকজমক এবং থিমভিত্তিক মণ্ডপগুলো এক অন্যরকম পরিবেশ তৈরি করে, যা দেখলে প্রতিটি দর্শক মুগ্ধ হয়ে যায়। তবে কীভাবে শুরু হয়েছিল জানেন? এর পিছনে রয়েছে নানা পৌরাণিক ও প্রচলিত কাহিনি।
দেবী জগদ্ধাত্রী, যিনি চার হাতের, সিংহবাহিনী আর অসুরবধের জন্য অস্ত্রধারী, বাংলার মানুষের ভক্তি ও আবেগের অন্যতম কেন্দ্র। বিশাল রূপ, টানা চোখ, চার হাতে অস্ত্র ও সোনা-রুপোর অলঙ্কারে সজ্জিত প্রতিমা দর্শককে মুগ্ধ করে।
চন্দননগরের জগদ্ধাত্রী পুজোর (Chandannagar Jagaddhatri Puja) শুরু নিয়ে নানা মত আছে। কথিত আছে, নদিয়ার রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের সময় থেকেই পুজো শুরু হয়। ১৭১০ সালে ইংরেজ বিদ্রোহী যুদ্ধের সময় ব্রিটিশ ঘনিষ্ঠ রাজাদের বন্দি করেন নবাবরা। রাজা কৃষ্ণচন্দ্র ছিলেন তাঁদের মধ্যে একজন। বন্দিদশায় থাকায় দুর্গাপুজোর সময় তিনি মায়ের দর্শন করতে পারেননি। তাই তাঁর মন খারাপ হয়ে যায়। সেইসময়েই কারাগারেই দেবী জগদ্ধাত্রী রূপে তাঁকে দেখা দেন এবং পুজো করার নির্দেশও দিয়েছিলেন। এরপর যখন তিনি মুক্তি পেয়ে বাইরে আসে, দেবীর নির্দেশ মতোই কার্তিক মাসের শুক্লা নবমীতে জগদ্ধাত্রীর আরাধনা (Chandannagar festival traditions) করার জন্য পুজো শুরু করেন।
অন্য একটি কাহিনি অনুযায়ী, চন্দননগরের (Chandannagar festival traditions) স্থানীয় দেওয়ান ইন্দ্রনারায়ণ চৌধুরী প্রথম পুজোর আয়োজন করেন। তিনি কৃষ্ণনগর রাজবাড়িতে অনুষ্ঠিত পুজো দেখে মুগ্ধ হয়ে নিজ এলাকায় পুজো শুরু করেন। ইন্দ্রনারায়ণের হাতে পুজো শুরু হলেও, ইতিহাসে তাঁর সময়কাল নিয়ে কিছু বিতর্ক রয়েছে।
চন্দননগরে জগদ্ধাত্রী পুজোর শুরু হয় জলঙ্গী পাড়ে। তৃতীয় এক কাহিনি বলে, কৃষ্ণচন্দ্রের দেওয়ান দাতারামের বিধবা কন্যা ভদ্রেশ্বরের তেঁতুলতলায় প্রায় ১৭৬২ সালে জগদ্ধাত্রী পুজো শুরু করেন। যদিও কিছু ইতিহাসবিদ মনে করেন, সেই পুজোয় রাজা কৃষ্ণচন্দ্রও অর্থ সহযোগিতা দিতেন। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই পুজো বর্তমানের শিবতলা অঞ্চলে চলে আসে। মাঝে আর্থিক সমস্যার কারণে পুজো বন্ধ হওয়ার উপক্রম হলেও গৌরহাটি অঞ্চলের মানুষ দায়িত্ব নিয়ে পুজো চালিয়ে যাচ্ছেন। বর্তমানে এই পুজো 'তেঁতুলতলা পুজো' নামে পরিচিত। প্রতি বছর হাজারও মানুষ এখানে ভিড় জমায়।
চন্দননগরের জগদ্ধাত্রী পুজো কেবল ধর্মীয় অনুষ্ঠান নয়, এটি ঐতিহ্য, আলোর খেলা, জাঁকজমক এবং সামাজিক মিলনের এক বিশেষ উদাহরণ। বিশাল প্রতিমা, মণ্ডপের সাজসজ্জা ও শহরের আলোকছটা দর্শকদের মন ছুঁয়ে যায় এবং উৎসবকে করে তোলে সত্যিই অনন্য।