অমিত শাহকে ফোন করে রিপোর্ট নিলেন মোদী, ঘটনার তদন্তভার পেল এনআইএ |
ঝাড়গ্রামের হেমন্তে নলেন গুড়ের ঘ্রাণ, মিষ্টির দেশে তবু চিন্তার ছায়া
ঝাড়গ্রামের হেমন্তে নলেন গুড়ের ঘ্রাণ
ভোরের কুয়াশায় ঢেকে থাকা ঝাড়গ্রামের মাঠে নেমেছে হেমন্ত। ঠান্ডা হাওয়ার ছোঁয়ায় যেন জেগে উঠেছে প্রকৃতি। এই সময়টাতেই শুরু হয় জেলার ঐতিহ্যবাহী এক রসাল অধ্যায়, খেজুর রস আর নলেন গুড়ের মরশুম।
ইতিমধ্যেই বিনপুর, জামবনি থেকে বেলপাহাড়ি পর্যন্ত গ্রামাঞ্চলে ডেরা বেঁধেছেন রস সংগ্রহকারীরা, যাঁদের স্থানীয়রা ভালবেসে বলেন ‘শিউলি’। ভোররাত থেকেই তাঁদের ব্যস্ততা, গাছের কাণ্ডে ঝুলছে মাটির হাঁড়ি, ফুটছে রসের টিনের পাত্র, তার গন্ধ মিশে যাচ্ছে সকালের কুয়াশায়। সেই ফুটন্ত রসই রূপ নিচ্ছে সোনালি গুড়ে— যা শুধু খাদ্য নয়, ঝাড়গ্রামের মাটির সঙ্গে মিশে থাকা এক ঐতিহ্য।
বিনপুর-২ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি বিকাশচন্দ্র সর্দার জানালেন, “খেজুর রস আমাদের সংস্কৃতির অঙ্গ। গুড়ের সঙ্গে জড়িয়ে আছে আমাদের শিকড়ের গল্প।”
তবে এই মিষ্টি মরশুমে একটু তিক্ততাও রয়েছে। শিউলিদের অভিযোগ, খেজুর গাছের সংখ্যা প্রতি বছরই কমছে। জামবনির গিধনি গ্রামের আসাউদ্দিন দালাল বললেন, “ঠান্ডা ঠিকমতো না পড়ায় রসও কম হচ্ছে। যা পাচ্ছি, তা দিয়েই গুড় বানাচ্ছি। কিলোপ্রতি ১২০ টাকায় বিক্রি করছি।”
খেজুর গাছের মালিকরাও চিন্তিত। স্থানীয় জগেন মুর্মু জানালেন, “প্রতিবারের মতো এবারও মাস তিনেকের জন্য গাছ লিজে দিয়েছি। কিন্তু গাছ কমে যাওয়ায় শিউলিরা আগের মতো রস পাচ্ছেন না।”
তবু উৎসবের আবহ কমেনি। পর্যটকদের ভিড় বাড়ছে ঘাগড়া, বেলপাহাড়ি, লোধাশুলি এলাকায়। প্লাস্টিকের ছোট কৌটোয় বিক্রি হচ্ছে নলেন গুড়, হাতে তুলে নিচ্ছেন পর্যটকরা স্মৃতিচিহ্নের মতো। বিক্রেতা নুর মহম্মদ মণ্ডলের কথায়, “আমাদের পাহাড়ি এলাকার খেজুর রসের ঘ্রাণ আলাদা। তাই বিক্রিও দারুণ চলছে।”
শিউলিরা আশায় বুক বেঁধেছেন, শীত পড়বে, ঠান্ডা বাড়বে, রসও হবে মিষ্টি আর ঘন। কারণ, ঝাড়গ্রামের হেমন্ত মানেই সকালের কুয়াশায় খেজুর রসের গন্ধ, উনুনে ফুটতে থাকা ঘন গুড়, আর সেই সুবাসে ভরে ওঠা বাঙালির শীতের শুরু।