পুরনো আইনে এমন শব্দ দেখে থমকাল সুপ্রিম কোর্টও
ভারতের এক শতাব্দী পুরনো শ্রম আইনে একটি শব্দবন্ধে চমকে গেল সুপ্রিম কোর্টও। তা হল—‘অপ্রাপ্তবয়স্ক বিধবা বোন’ (widowed minor sister)!
আইনের ভাষায় একে বলা হয় এমপ্লিয়জ কমপেনসেশন অ্যাক্ট (Employees’ Compensation Act, 1923)—যা মূলত কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনায় মৃত্যু বা আহত শ্রমিকের পরিবারের ক্ষতিপূরণের নিয়ম নির্ধারণ করে। সেই আইনের ২(১)(ডি) ধারায় ‘নির্ভরশীলদের’ সংজ্ঞায় লেখা আছে—“A minor brother or an unmarried sister or a widowed sister, if a minor.” অর্থাৎ, অপ্রাপ্তবয়স্ক ভাই, অবিবাহিতা বোন, অথবা অপ্রাপ্তবয়স্ক বিধবা বোনও তাঁর উপর নির্ভরশীল।
শতাব্দী পুরনো সংজ্ঞার গলদ
এখানেই ধরা পড়েছে আইনের অদ্ভুত গলদ। কারণ, আজকের আইন অনুযায়ী অপ্রাপ্তবয়স্ক বিবাহই বেআইনি। ফলে “অপ্রাপ্তবয়স্ক বিধবা বোন”—এমন কোনও ব্যক্তি আইনের চোখে থাকতেই পারে না!
সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি রাজেশ বিন্দল ও বিচারপতি মনমোহন এই সংজ্ঞাকে “পুরনো সামাজিক বাস্তবতার অবশেষ” বলে মন্তব্য করেছেন। আদালত কেন্দ্রীয় সরকারকে জানিয়েছে, এই সংজ্ঞা বদলানো জরুরি এবং বিষয়টি আইন কমিশনের কাছে পুনর্বিবেচনার জন্য পাঠানো হোক।
মামলার পটভূমি
এই মৌলিক সমস্যা নিয়ে একটি মামলায় প্রশ্ন উঠেছে। নিউ ইন্ডিয়া অ্যাসিওরেন্স কোম্পানি (New India Assurance Company) এ ব্যাপারে কর্ণাটক হাই কোর্টের এক রায়কে চ্যালেঞ্জ করেছে। ২০০৯ সালে হাই কোর্ট মৃত কর্মীর দুই বিধবা বোনকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল।
বিমা সংস্থার দাবি—আইনে কেবল ‘অপ্রাপ্তবয়স্ক বিধবা বোন’কেই নির্ভরশীল বলা হয়েছে, তাই প্রাপ্তবয়স্ক বোনদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার প্রশ্নই ওঠে না।
আদালতের পর্যবেক্ষণ
সুপ্রিম কোর্টের মতে, “হিন্দু ম্যারেজ অ্যাক্ট, ১৯৫৫ প্রণয়নের পর ‘অপ্রাপ্তবয়স্ক বিধবা বোন’-এর মতো সংজ্ঞা বাস্তবের সঙ্গে আর মেলে না।” আদালত মনে করেছে, এটি এমন এক ‘আইনি অসঙ্গতি’ (legal anachronism) যা সময়ের সঙ্গে বেমানান হয়ে পড়েছে, অথচ এখনও আইনবইয়ে টিকে আছে।
শিশুবিবাহ ও আইনের বিবর্তন
১৯২৩: আইন চালুর সময় শিশুবিবাহ স্বীকৃত ছিল।
১৯২৯: Child Marriage Restraint Act—প্রথমবার বিয়ের ন্যূনতম বয়স ১৪ ও ১৮ নির্ধারিত হয়।
১৯৭৮: বয়স বেড়ে হয় ১৮ (মহিলা) ও ২১ (পুরুষ)।
২০০৬: Prohibition of Child Marriage Act চালু হয়, শিশুবিবাহকে অপরাধ ঘোষণা করে শাস্তিযোগ্য করে।
এর পর থেকেই “অপ্রাপ্তবয়স্ক বিধবা”—এই ধারণা পুরোপুরি অচল হয়ে যায়।
২০১৭-র সংশোধনেও ‘গোল’
২০১৭ সালে আইনে বড়সড় পরিবর্তন আনা হলেও ওই পুরনো সংজ্ঞা অপরিবর্তিত রয়ে যায়। ফলে ১০২ বছর পরও সেই অসম্ভব চরিত্র আইন বইয়ের পাতায় রয়ে গেছে।
সুপ্রিম কোর্টের পর্যবেক্ষণ, এই ধারা শুধু অবাস্তব নয়, বরং কল্যাণমূলক আইনের মধ্যেই যুক্তিগত অসংগতি তৈরি করছে। আদালত তাই দ্রুত সংশোধনের সুপারিশ করেছে।