একসঙ্গে তিন তিনটি রয়েল বেঙ্গল টাইগার
অবিশ্বাস্য! সুন্দরবনের নীল–সবুজ জলের বুক চিরে ভেসে উঠল এক বিরলতম মুহূর্ত—একসঙ্গে তিন তিনটি রয়েল বেঙ্গল টাইগার! সিনেমার দৃশ্য নয়, একেবারে বাস্তবের জঙ্গলরাজে এমন দৃশ্য দেখেই শিহরিত তিন অভিযাত্রী।
সোমবার সকাল। ঝড়খালি ফেরিঘাট থেকে লঞ্চে চেপে বেরিয়েছিলেন তিনজন—আসামের অভিনন্দন রায়, কলকাতার ফটোগ্রাফার ফ্রান্সিস নায়েক এবং ঝড়খালিরই তন্ময় মণ্ডল। গন্তব্য সুন্দরবনের অজানা জলধারা। লঞ্চ দেউল ভাড়ানির কাছাকাছি পৌঁছতেই হঠাৎই চোখ আটকে যায় অবিশ্বাস্য এক দৃশ্যে।
খাঁড়ির নিস্তব্ধ জলে সূর্যের আলো চিকচিক করছে। এমন সময় জলের ভিতর থেকে মাথা তোলে প্রথম বাঘ। তার মিনিট দু’য়েক পর আরও দুটি। এক, দুই, তিন—হাতে গোনা তিনটি বাঘ! বনের বাদশাহেরা যেন নিজেদের জল–উৎসবেই মেতে উঠেছে।
স্রোতের দোলায় স্বচ্ছন্দ সাঁতার, মাঝে মাঝে খেলাচ্ছলে একে অন্যকে ছোঁয়া—দেখলে মনে হয় বাঘেদের কোনও তাড়া নেই, কোনও ভয় নেই। প্রকৃতির রাজ্যে তাদেরই স্বাভাবিক আধিপত্য।
লঞ্চের ডেকে দাঁড়িয়ে তিন অভিযাত্রী মুহূর্তের জন্য স্তব্ধ। তারপরই শুরু দৌড়ঝাঁপ—ক্যামেরা তোলে তন্ময়, অ্যাঙ্গেল বদলান ফ্রান্সিস, আর অভিনন্দন চিৎকার করে বলেন, “এটা তো জীবনে একবারই দেখা যায়!” মুহূর্তেই বন্দি হয়ে যায় সেই স্বপ্ন–সম দৃশ্য—খাঁড়ি পার হওয়া তিন বাঘের জলকেলি!
ইতিমধ্যে ভাইরাল ভিডিও দেখেছেন বনমন্ত্রী বীরবাহা হাঁসদাও। টেলিফোনে দ্য ওয়ালকে তিনি বললেন, "অনেক সময় না জেনে মানুষ বন দফতরের বদনাম করে। কিন্তু আমাদের বনকর্মীরা সকাল থেকে রাত পর্যন্ত আপ্রাণ বন্যপ্রাণ নিয়ে পড়ে রয়েছে বলেই কিন্তু জঙ্গলে বাঘ বা অন্যান্য বন্যপ্রাণের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাই তো এমন বিরল দৃশ্যরও সাক্ষী থাকার সুযোগ পাচ্ছেন পর্যটকরা।"
পর্যটক–গাইডদের মতে, সুন্দরবনে বাঘ দেখা যেমন কঠিন, তেমনই একসঙ্গে তিন বাঘকে সাঁতরাতে দেখা প্রায় অলৌকিক। এই দৃশ্য শুধু রোমাঞ্চই নয়—সুন্দরবনের বন্যপ্রাণের শক্তি, উদারতা ও রহস্যের এক জীবন্ত দলিল।