দিল্লি জুড়ে দূষণের দোসর ভাইরাল জ্বর
দিল্লি ও সংলগ্ন এনসিআর এলাকার আকাশ সম্পূর্ণ ধোঁয়ার মেঘে ঢাকা। এই দূষণে রাজধানীর বাসিন্দাদের জীবন ওষ্ঠাগত হয়ে উঠেছে শ্বাসকষ্টে। একটি নতুন সমীক্ষায় ধরা পড়েছে, এই বিস্তীর্ণ অঞ্চলের চারটি বাড়ির মধ্যে তিনটি বাড়িতে অন্তত একজন করে অসুস্থ হয়েছেন অতি সম্প্রতি। একদিকে বিষাক্ত বাতাস, অন্যদিকে মরশুমি জীবাণু সংক্রমণের সাঁড়াশি আক্রমণে দিল্লি ও সংলগ্ন এলাকা জুড়ে জনস্বাস্থ্য চরম সংকটে পড়েছে।
দিল্লি, গুরুগ্রাম, নয়ডা, ফরিদাবাদ এবং গাজিয়াবাদের প্রায় ১৫ হাজার মানুষের উপর এই সমীক্ষাটি চালায় লোকালসার্কল নামে একটি সংস্থা। সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, গত একমাস ধরে দিল্লি ও সন্নিহিত অঞ্চলে অসুস্থতা বিরাট মাত্রায় বেড়েছে। সেপ্টেম্বরের শেষ দিক নাগাদ দেখা গিয়েছিল ৫৬ শতাংশ পরিবারের একজন বা একাধিক ব্যক্তি অসুস্থ রয়েছেন। সেই পরিমাণটাই এখন বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭৫ শতাংশে।
H3N2 ইনফ্লুয়েঞ্জা এবং অন্যান্য ভাইরাল সংক্রমণ নিয়ে প্রায় রোজই ডাক্তারদের চেম্বারে ভিড় জমাচ্ছেন সাধারণ মানুষ, বিশেষত বাচ্চা ও বৃদ্ধরা, যাদের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা কম। উপসর্গগুলি হল- ধারাবাহিক জ্বর এবং কাশি, গলা ব্যথা এবং গায়ে হাতপায়ে যন্ত্রণা। বাসিন্দারা জানান, সেরে উঠতে সময় লাগছে অন্তত ১০ দিন।
রিপোর্টে বলা হয়েছে, এই ভাইরাস বেশি করে কাবু করে ফেলছে বাচ্চাদের এবং বয়স্কদের। প্রতিবছর উৎসবের মরশুম শুরু হলেই এবং শীতকালের আগমনি উত্তর ভারতের আনাচেকানাচে এলেই দূষণে জর্জরিত হয়ে পড়ে দেশের রাজধানী। বায়ুদূষণের সূচক তরতর করে বেড়ে ৪০০-৫০০য় গিয়ে ঠেকেছে। যা একেবারে ভয়ানক বিপজ্জনক স্তরে। এর নেপথ্যে কারণ হল- বাজি পোড়ানো, ফসলের গোড়া পোড়ানো এবং গাড়ির ধোঁয়া। বাতাসে ঘোরা অতি সূক্ষ্ম ধাতুকণার (PM2.5) পরিমাণ ৩৫০ জি/এমে ঠেকেছে। যা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্ধারিত স্তরের প্রায় ১০ গুণ।
সমীক্ষা বলছে, চারটি বাড়ির মধ্যে তিনটিতে কেউ না কেউ কাশি, গলা ব্যথা, নাক বন্ধ, চোখ জ্বালা করা এবং মাথা যন্ত্রণায় ভুগছেন। যা বায়ুদূষণের পুরনো উপসর্গ। এরমধ্যে গোদের উপর বিষফোঁড়ার মতো দেখা দিয়েছে মরশুমি ভাইরাল সংক্রমণ। তীব্র দূষণের দোসর হিসেবে উৎপাত শুরু করেছে এই ভাইরাস। ফলে এরসঙ্গে দেখা দিচ্ছে প্রবল শ্বাসকষ্ট।
সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে- বাড়িতে চার অথবা তার বেশিজন আক্রান্ত এমন পরিবার প্রায় ১৭ শতাংশ। ২৫ শতাংশের বাড়িতে আক্রান্তের সংখ্যা দুই অথবা তিনজন। ৩৩ শতাংশের ঘরে নিদেনপক্ষে একজন ভুগছেন। মাত্র ২৫ শতাংশের বাড়িতে সকলেই সুস্থ আছেন।