হতাশ রানাঘাটের পুলিশ
দুর্গাপুজো ও কালীপুজোর শোভাযাত্রায় আগের তুলনায় মহিলাদের স্বতঃস্ফূর্ত যোগদান বেড়েছে। কমবেশি সব জেলাতেই তা হয়েছে। তবে নদিয়া জেলায় বিভিন্ন শোভাযাত্রায় মহিলাদের ভূমিকা নিয়ে তীব্র অসন্তোষ ও হতাশা প্রকাশ করলেন জেলা পুলিশের এক শীর্ষ কর্তা। তাঁর কথায়, শোভাযাত্রায় বেরিয়ে মেয়েরা রাস্তায় দাঁড়িয়ে মদ খাচ্ছে, তাদের বাগে আনা যাচ্ছে না। কোনও কথা শুনছে না। উল্টে অত্যাচার করছে, তাণ্ডব করছে।
সম্প্রতি শান্তিপুরের এক পুজো উদ্যোক্তাদের বৈঠকে গিয়েছিলেন রানাঘাট পুলিশ জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (Ranaghat, Additional Superintendent of Police) লাল্টু হালদার। তাঁর বক্তৃতার একটি অংশ ভাইরাল হয়েছে। দ্য ওয়াল ভিডিওটির সত্যতা যাচাই করেনি। তবে লাল্টু হালদারও তা অস্বীকারও করেননি। তাঁর দাবি, “আমি কেবল শান্তিপুরের কালীপুজোর অভিজ্ঞতার কথা বলেছি। মেয়েরা রাস্তায় প্রকাশ্যে মদ খেয়েছেন— সেটাই বলেছি। মদ খেয়ে অসভ্যতা করলে পুলিশ চুপ করে থাকবে কেন?”
ভিডিওতে দেখা যায়, পুজো উদ্যোক্তাদের উদ্দেশে লাল্টু বলছেন, “আমার বলতে লজ্জা করছে, কিন্তু রাস্তায় দাঁড়িয়ে ইয়ং মেয়েরা মদ খাচ্ছেন। এটা যদি শোভাযাত্রার শোভা হয়, আমি তার নিন্দা করি। বাড়ির মেয়েরা যদি এমন হন, সমাজ উচ্ছন্নে যাবে। মহিলাদের বাগে আনা যাচ্ছে না।”
এখানেই থামেননি তিনি। ভাইরাল ভিডিওয় তাঁকে এও বলতে শোনা যায়, “মহিলারা আজকাল অন্যায়ভাবে প্রশাসনের সঙ্গে অসহযোগিতা করছেন। এই প্রবণতা ক্রমশ বাড়ছে। উৎসব এক দিনের, কিন্তু পরদিনই দাম্পত্যকলহ। প্রশ্রয় পেয়ে এসব ঘটছে।”
লাল্টুর দাবি, “এখন মেয়েরাই ছেলেদের চেয়ে বেশি মদ খান। কালীপুজোয় মেয়েদের রাস্তায় দাঁড়িয়ে মদ খেতে দেখেছি। এটা লজ্জার সীমা ছাড়িয়ে গিয়েছে।”
পুলিশকর্তার এই মন্তব্যে ইতিমধ্যেই সমাজের নানা স্তরে তীব্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে। নারী অধিকার কর্মীদের একাংশের মতে, এক জন দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশকর্তার মুখে এমন মন্তব্য “চরম অরুচিকর” এবং “নারীবিদ্বেষী”। তবে ভিন্ন মতও রয়েছে। পর্যবেক্ষকদের অনেকের মতে, ওই পুলিশ কর্তা তাঁর ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার কথা বলেছেন। মহিলাদের মদ্যপানের অধিকার নিয়ে তিনি কোনও প্রশ্ন তোলেননি। তিনি আপত্তি জানিয়েছেন, রাস্তায় দাঁড়িয়ে মদ খাওয়া, প্রশাসনের সঙ্গে অসযোগিতা করা ও এক শ্রেণির মদ্যপ মহিলার তাণ্ডব নিয়ে। এটা আইনশৃঙ্খলার প্রশ্ন। কোনও পুরুষ এটা করলে তাও শাস্তিযোগ্য।