নিজের চামড়া দিয়েই একরত্তি ছেলেকে দিলেন নতুন জীবন
মনীষা (৩০) ও তাঁর ছোট্ট ছেলে ধ্যানশ দু’জনেই থাকতেন ওই দুর্ঘটনাগ্রস্ত বিল্ডিংয়ে। আগুনে চারদিক অন্ধকার, ধোঁয়ায় ঢেকে গিয়েছিল সবকিছু। কিছুই দেখা যাচ্ছিল না। তবুও মনীষা ছেলেকে বুকের মাঝে জড়িয়ে কোনওমতে দৌড়ে বেরিয়ে আসেন। দু’জনেই আগুনে মারাত্মকভাবে পুড়ে যান, কিন্তু বেঁচে যান।
১২ জুনের সেই দুপুরটা কেবল একটা দুর্ঘটনা নয়, বরং একটা অলৌকিক ঘটনা, এক মায়ের অটুট ভালবাসার নিদর্শন হয়ে চিরদিনের জন্য লেখা হয়ে গেল ইতিহাসে।গুজরাতের আহমেদাবাদের মেঘানিনগরে বিজে মেডিক্যাল কলেজ চত্বরে একটি আবাসিক ভবনের উপর ভেঙে পড়ে এয়ার ইন্ডিয়ার বিমান। মুহূর্তে চারপাশে ছড়িয়ে পড়ে আগুন, ধোঁয়া আর আর্তনাদ। ঠিক সেই বিভীষিকার মাঝেই নিজের আট মাসের শিশু সন্তান ধ্যানশকে বুক দিয়ে আগুনের হাত থেকে বাঁচিয়ে দিলেন মা মনীষা কাছাডিয়া।
মনীষা (৩০) ও তাঁর ছোট্ট ছেলে ধ্যানশ—দু’জনেই থাকতেন ওই দুর্ঘটনাগ্রস্ত বিল্ডিংয়ে। আগুনে চারদিক অন্ধকার, ধোঁয়ায় ঢেকে গিয়েছিল সবকিছু। কিছুই দেখা যাচ্ছিল না। তবুও মনীষা ছেলেকে বুকের মাঝে জড়িয়ে কোনওমতে দৌড়ে বেরিয়ে আসেন। দু’জনেই আগুনে মারাত্মকভাবে পুড়ে যান, কিন্তু বেঁচে যান।সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে মনীষা বলেন, “একটা মুহূর্ত এসেছিল, যখন মনে হয়েছিল—এবার বুঝি শেষ। কিন্তু আমার সন্তানকে বাঁচাতে আমাকে লড়তেই হতো। এই যন্ত্রণার ভাষা নেই। চোখে অন্ধকার, গায়ে আগুন, তবুও বুকের ভেতর একটাই কথা—ওকে কিছু হতে দেব না।”
দু’জনেরই দেহে ভয়ঙ্কর দগদগে ক্ষত। পাঁচ সপ্তাহ মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ে অবশেষে তাঁরা হাসপাতাল থেকে ছাড়া পান। মনীষার শরীরের ২৫ শতাংশ অংশ পুড়ে গিয়েছে—মুখ, হাত, গলা। আর ছোট্ট ধ্যানশের পুড়ে গিয়েছে ৩৬ শতাংশ—মুখ, পেট, বুক, হাত-পা সব জায়গায় গভীর ক্ষত।কেডি হাসপাতালের প্লাস্টিক সার্জেন ডাঃ ঋত্বিজ পারিখ বলেন, “ধ্যানশ খুবই ছোট। ওর শরীর থেকে ত্বক নেওয়ার উপায় ছিল না। তাই মনীষার শরীর থেকে চামড়া নিয়ে ওর দেহে স্কিন গ্রাফটিং করা হয়। সংক্রমণের ভয় ছিল প্রবল। তবুও ঝুঁকি নিয়ে আমরা এগোই, যাতে ওর স্বাভাবিক বৃদ্ধিতে কোনও বাধা না আসে।”অর্থাৎ, নিজের শরীর দিয়ে সন্তানকে বাঁচালেন মনীষা। আগুনের মধ্যে নিজের শরীর দিয়ে ছেলেকে আগলে বাঁচিয়েছেন একবার, এরপর নিজের ত্বক দিয়ে দ্বিতীয়বার বাঁচিয়েছেন ছেলের জীবন। মা যে! এমনই হন মা--- বলছেন সবাই।