বুকজলে হাঁটছেন দম্পতি
দ্বাপর যুগে, বাবা বাসুদেব প্রাণ বাঁচাতে ঝড়জলের মাঝে বুকজল ঠেলে সদ্যোজাত কৃষ্ণকে পৌঁছে দিয়ে এসেছিলেন নিরাপদ স্থানে। যুগ পাল্টেছে, কিন্তু নিদারুণ পরিস্থিতি আবারও এক বাবা-মাকে এনে দাঁড় করাল সেই একই জায়গায়।
ঘটনাটি উত্তরপ্রদেশের (Uttar Pradesh) প্রয়াগরাজের (Prayagraj)। ভয়ানক বৃষ্টিতে বেশিরভাগ এলাকা চলে গিয়েছে জলের তলায়। জলমগ্ন সেই এলাকার এক করুণ পরিস্থিতি উঠে এল সোশ্যাল মিডিয়ার পাতায়। একটি ভাইরাল ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, ছোটা বাঘাদা এলাকায় রবিবার বুকজল (flood in Uttar Pradesh) ঠেলে মাথার ওপর তুলে সদ্যোজাতকে (Parents carry infant overhead) নিরাপদ স্থানে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন এক দম্পতি।
ফুটেজেই স্পষ্ট, বাড়ি-মন্দির, রাস্তায় রাখা গাড়ি কার্যত জলের তলায়। চারদিকে নোংরা-আবর্জনা ভেসে বেড়াচ্ছে। ফলে, কিছু মানুষ জীবনযাপনের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রটুকু সম্বল করে পরিবারকে সঙ্গে নিয়ে ওই নিজের বাসস্থান, ওই এলাকা ছাড়তে বাধ্য হচ্ছেন। শুধুমাত্র নিজেদের জীবনরক্ষার তাগিদ তাড়া করে বেড়াচ্ছে তাঁদের।
উত্তরপ্রদেশের বেশিরভাগ এলাকার পরিস্থিতি খারাপ হলেও বিশেষ করে প্রয়াগরাজের অবস্থা শোচনীয়। ক্রমাগত বৃষ্টির ফলে গঙ্গা-যমুনার জলস্তর বিপদসীমা ছাড়িয়েছে বয়ে চলেছে। ছোটা বাঘাদা-সহ নদী সংলগ্ন এলাকার পরিস্থিতি চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। রাস্তা ডুবে গিয়েছে, বাড়িঘর কোথাও আংশিক আবার কোথাও বা পুরোপুরি জলের তলায়। সবমিলিয়ে বিপর্যস্ত হয়ে উঠেছে জনজীবন।
জীবন কাটানো যেমন দুষ্কর হয়ে উঠেছে, তেমনই মৃত্যুর পর শেষযাত্রাতেও তা যেন অব্যাহত। বন্যাকালীন পরিস্থিতিতে রাসুলাবাদ ঘাটে সৎকারের পরিষেবাতেও বাধার সম্মুখীন হতে হচ্ছে মৃতের পরিবার-পরিজনদের। কারণ সেই এলাকা যে জলের তলায়।
বস্তুত, জল পেরিয়ে সাধারণ জীবনযাপন আর সাধারণের পর্যায়ে নেই, তা হয়ে উঠেছে নিত্য যন্ত্রণার সমান। বৃষ্টি থামার নাম নেই, সমস্যা বেড়ে চলেছে দিনের পর দিন।
রবিবার পর্যন্ত তথ্যের ভিত্তিতে সরকারি সূত্র বলছে, টানা বৃষ্টিতে উত্তরপ্রদেশের প্রায় ৪০২টি গ্রাম কার্যত বিপর্যস্ত। প্রয়াগরাজ তো বটেই গাজিপুর, মির্জাপুর, আগ্রা, বারানসি, ফতেপুর-সহ প্রায় ১৭টি জেলার ওপর বন্যার প্রকোপে মানুষ ভীত, সন্ত্রস্ত। প্রকৃতির সঙ্গে মানুষের সহাবস্থানের, মানিয়ে নেওয়ার এ যেন নিরন্তর, চিরকালীন এক প্রচেষ্টা।