৮ লক্ষ বছর আগের হাড় পেলেন নৃতত্ববিদরা
প্রাচীন গুহায় মিলল ছোট শিশুর কঙ্কাল। আর তাতেই মিলল চাঞ্চল্যকর তথ্য—মানবজাতির পূর্বপুরুষেরা খেত শিশুদের মাংস! ব্যাপারটা ঠিক কী, সেটাই ভাবছেন তো? আসলে, স্পেনের উত্তরের আতাপুয়েরকা অঞ্চলের গ্রান ডোলিনা গুহা থেকে পাওয়া গেছে একটি শিশুর গলার হাড়, যার বয়স ছিল আনুমানিক দুই থেকে চার বছরের মধ্যে। স্পষ্ট দেখা গেছে ধারালো কিছু দিয়ে তা কাটা হয়েছে, যা দেখে গবেষকরা বলছেন, তাকে হয়তো গলা কেটে হত্যা করা হয়েছিল।
বার্সেলোনার কাতালান ইনস্টিটিউট অব হিউম্যান প্যালিওইকোলজি অ্যান্ড সোশ্যাল ইভলিউশনের (IPHES) প্রত্নতাত্ত্বিকরা বলছেন, এই শিশুটি ছিল Homo antecessor প্রজাতির, যাদেরই একধারে মনে করা হয় আধুনিক মানুষ ও নিয়ানডারথালদের শেষ সাধারণ পূর্বপুরুষ।
এই আবিষ্কারের অন্যতম পরিচালক ডঃ পালমিরা সালাদি বলেন, “গলার হাড়ে যে কাটার দাগ দেখা যাচ্ছে, তা স্পষ্টভাবে বলছে—এই শিশুটিকে গলা কেটে শরীর থেকে মাথা আলাদা করা হয়েছিল। আর সেটাই প্রমাণ করে, তাকে শিকারের মতো করেই মাংস হিসেবে ব্যবহার করা হয়।”
আগে থেকেও জানা ছিল, সেই প্রাচীন যুগে মানুষের মধ্যে নরখাদনের চল ছিল। তবে শিশুদের ক্ষেত্রে এমন ঘটনা খুবই বিরল। গবেষকদের মতে, যদি এই প্রমাণ যাচাইয়ে ঠিক হয়, তবে এটি হতে পারে শিশুকে খাওয়ার সবচেয়ে প্রাচীন প্রমাণ। সালাদি আরও বলেন, “যে দাগ আমরা দেখেছি, তা কেবল হাড় কাটা নয়, বরং বারবার একই পদ্ধতিতে মৃতদেহ ব্যবহারের নিদর্শন। বোঝাই যাচ্ছে, এটা কোনও ব্যতিক্রম নয়, বরং চলমান প্রথা ছিল।”
জানা গিয়েছে, Homo antecessor প্রজাতির মানুষরা আজকের মানুষের চেয়ে খাটো ও গঠনগতভাবে একটু মোটা ছিলেন। তাঁদের মস্তিষ্কের আয়তন ছিল ১০০০ থেকে ১১৫০ ঘন সেন্টিমিটার, যেখানে আজকের মানুষের গড় আয়তন প্রায় ১৩৫০ ঘন সেন্টিমিটার। গবেষকদের কথায়, “প্রতিবছর আমরা এমন সব তথ্য সামনে আনছি, যা আমাদের পূর্বপুরুষদের জীবনযাপন, মৃত্যু এবং মৃতদেহের ব্যবহার সংক্রান্ত ধারণাকে নতুনভাবে ভাবতে বাধ্য করছে।”