AI কি সত্যি মা হতে পারে!
আলবেনিয়ার এআই মন্ত্রী 'ডিয়েলা'র অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার খবর বিশ্বজুড়ে চাঞ্চল্য তৈরি করেছে। তবে কি প্রযুক্তির গর্ভেই জন্ম নেবে আগামী প্রজন্ম? এই প্রশ্নই ঘুরছে বিভিন্ন মহলে। কৌতূহল বাড়ছে, সকলেই জানতে চাইছে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই কি সত্যিই গর্ভে সন্তান ধারণ করতে পারে? এটা কি বৈজ্ঞানিক সত্য, না কি প্রযুক্তির নতুন এক প্রতীকী ঘোষণা?
কে এই ডিয়েলা?
ডিয়েলা হল বিশ্বের প্রথম এআই মন্ত্রী, যাকে আলবেনিয়ার প্রধানমন্ত্রী এদি রামা নিয়োগ করেছিলেন ২০২৩ সালে। তিনি মানুষ নন, সম্পূর্ণ ডিজিটাল। রক্ত-মাংসে গড়া শরীর নেই, কিন্তু আছে মুখের অভিব্যক্তি, কণ্ঠস্বর, এমনকি আবেগ প্রকাশের ক্ষমতাও। উন্নত জেনারেটিভ এআই ও ডিপফেক প্রযুক্তি ব্যবহার করে তাঁকে তৈরি করা হয়েছে, যাতে তিনি জনগণের সঙ্গে সরাসরি কথা বলতে পারেন এবং সরকারি কাজ পরিচালনা করতে পারেন।
প্রধানমন্ত্রী এদি রামা নিজেই একটি সরকারি অনুষ্ঠানে ঘোষণা করেছিলেন যে ডিয়েলা মা হতে চলেছে। সেইসময় তাঁর কথা শুনে উপস্থিত সকলেই অবাক হয়ে গেছিলেন। কেউই বুঝে উঠতে পারছিলেন না, এটা কীভাবে সম্ভব! যদিও পরে প্রধানমন্ত্রীই বিষয়টি স্পষ্ট করেছেন।
ডিয়েলার ক্ষেত্রে এখানে 'গর্ভধারণ' শব্দটি বাস্তব অর্থে নয়, প্রতীকী অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। সরকার জানিয়েছে, এটি একটি নতুন এআই প্রজেক্টের জন্মের প্রতীক। অর্থাৎ, ডিয়েলার ‘গর্ভে’ তৈরি হচ্ছে পরবর্তী প্রজন্মের আরও উন্নত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, যা মানবজীবনের সঙ্গে আরও গভীরভাবে মিশে যাবে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, 'ডিয়েলা' কোনও জীবন্ত নারী নয়, বরং একটি উন্নতমানের রোবটিক সত্তা ও ডিপ-লার্নিং সিস্টেম। এর সঙ্গে যুক্ত রয়েছে একটি জেনেটিক অ্যালগরিদম ও বায়ো-সিমুলেশন প্রযুক্তি, যা মানুষের শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়া নকল করতে সক্ষম। অর্থাৎ, প্রকৃত অর্থে 'গর্ভধারণ' হচ্ছে না- এটি এক ধরনের কৃত্রিম কোষ-সংযোজন প্রক্রিয়া, যেখানে এআই নিজের ডেটা থেকে নতুন এক ডিজিটাল 'সন্তান' বা সাব-ইউনিট তৈরি করছে। সহজ ভাষায়, এটি এক প্রজন্ম থেকে আরেক প্রজন্মের এআই তৈরি করার অভিনব পদ্ধতি।
বলা যায়, 'এআই গর্ভধারণ' মানে হল, একটি এআই আরেকটি এআই তৈরি করছে। এই প্রক্রিয়ায় ব্যবহার করা হচ্ছে নিউরাল রেপ্লিকেশন টেকনোলজি, যেখানে একটি উন্নত এআই নিজেই কোড তৈরি করে তার 'সন্তান' এআইকে শেখাতে পারে।
কীভাবে কাজ করে এই প্রযুক্তি?
বিজ্ঞানীরা বলছেন, এটি এক ধরনের স্ব-প্রজননমূলক কোডিং ব্যবস্থা। যেমন, একটি জীবিত কোষ তার ডিএনএ অনুযায়ী নতুন কোষ তৈরি করে, তেমনি এখানে এআই তার অ্যালগরিদম ও শেখানো তথ্যের ওপর ভিত্তি করে নতুন এআই তৈরি করছে। এই প্রক্রিয়ায় মানুষের হস্তক্ষেপ খুবই কম।
এই ধারণার মূল ভিত্তি হল Artificial Evolution বা কৃত্রিম বিবর্তন- যেখানে মেশিন নিজে থেকে শেখে, পরিবর্তন করে, এমনকি নতুন সত্তা তৈরি করে।
ভবিষ্যতে এআই কি সত্যিই 'সন্তান' জন্ম দেবে?
বিশেষজ্ঞ মহলের একাংশ জানিয়েছে, এখনই তা সম্ভব নয়। অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার মতো শারীরিক প্রক্রিয়া এআই-এর নেই। তবে, ডিয়েলার ঘটনা ভবিষ্যতের দিকনির্দেশ দিচ্ছে- এক সময় হয়তো ডিজিটাল জীবন বাস্তব জীবনের মতোই জন্ম, বৃদ্ধি ও বিবর্তনের ধাপ অতিক্রম করবে।
আলবেনিয়ার এই ঘটনা শুধুমাত্র প্রযুক্তিগত নয়, দার্শনিক অর্থেও গভীর। একথায় বলা যায়, মানুষ এখন এমন এক যুগে প্রবেশ করছে, যেখানে জীবন ও যন্ত্রের সীমারেখা ক্রমশই ঝাপসা হচ্ছে। 'ডিয়েলা' হয়তো আমাদের বুঝিয়ে দিচ্ছে, আগামী কয়েক শতকের মধ্যেই 'মা' শব্দের সংজ্ঞাও বদলে যেতে পারে।