এই শস্য চাষ করলেই কোটিপতি
পোস্তর বড়া, আলু পোস্ত – বাঙালির ঐতিহ্যগত খাদ্যপদ। এই যুক্তি দেখিয়েই বৈধভাবে বাংলাকে পোস্ত চাষের অনুমতি দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়। বর্তমানে শুধুমাত্র উত্তর প্রদেশ, রাজস্থান এবং মধ্য প্রদেশ – এই তিনটি রাজ্যকেই পোস্ত চাষের অনুমতি দেওয়া হয়। কিন্তু, ভারতে কিন্তু পোস্ত চাষের ইতিহাস দীর্ঘদিনের। বস্তুত, সেই দশম শতাব্দী থেকেই ভারতে পোস্ত চাষ করা হয়। বর্তমানে, পোস্ত চাষের সঙ্গে আফিমের মতো মাদক দ্রব্যের ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ থাকলেও, ঐতিহাসিকভাবে পোস্ত থেকে তৈরি আফিম ব্যথানাশক ওষুধ হিসেবে পরিচিত। সংস্কৃত ভাষা অধ্যুষিত উত্তর ভারতের পাশাপাশি উত্তর পূর্ব ভারতেও ঔষধি গুণের জন্যই চাষ করা হত পোস্ত। সংস্কৃত ভাষায় আফিম পরিচিত ‘আহি ফেন’ নামে, আর উত্তরপূর্ব ভারতে আফিম পরিচিত ‘কানি’ নামে।
স্বাধীনতার পরেও পোস্ত চাষের প্রতি ভারত সরকারের নিয়ন্ত্রণ ছিলই। ১৯৬১ সালে ‘সিঙ্গল কনভেনশন অন নারকোটিক ড্রাগস’ নামক এক সম্মেলন থেকে আফিমের নেশা মুক্তির ডাক দেওয়া হয়।পরে ভারত সরকার পোস্ত গাছ থেকে আফিমের আঠা উৎপাদন করার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। পরে ১৯৮৫ সালে আইন করে ভারতে পোস্ত চাষ নিষিদ্ধ করা হয়। ভারতে বর্তমানে শুধু তিনটি রাজ্য আইনি ভাবে পোস্ত চাষ করতে পারে। যার মধ্যে রয়েছে উত্তরপ্রদেশ, রাজস্থান এবং মধ্যপ্রদেশ।বিশ্বের হাতেগোনা দেশগুলির মধ্যে ভারত অন্যতম একটি যেখানে নিয়ন্ত্রিত ভাবে পোস্ত চাষ করা যায়, কৃষকরা লাইসেন্স পান পোস্ত চাষের জন্য, সেই অনুমতি ছাড়া পোস্ত চাষ করা যায় না। অস্ট্রিয়া, ক্রোয়েশিয়া, চেক রিপাবলিক, ডেনমার্ক, জার্মানি, হাঙ্গেরি, লিথুয়ানিয়া, পোল্যান্ড, রোমানিয়া, রাশিয়া, সার্বিয়া, স্লোভাকিয়া, স্লোভেনিয়া, তুরস্ক, এবং ইউক্রেনে পোস্ত চাষ হয়।
ঐতিহাসিকভাবেই ভারতে পোস্ত চাষ হয়ে এসেছে। কিন্তু, তাহলে এখন কেন পোস্ত চাষের উপর এত কড়াকড়ি? কেন শুধুমাত্র তিনটি রাজ্যকেই পোস্ত চাষের অনুমতি দেওয়া হয়? এর পিছনে রয়েছে, ১৯৬১ সালে রাষ্ট্রপুঞ্জের আয়োজিত ‘সিঙ্গল কনভেনশন অন নারকোটিক ড্রাগস’। এই কনভেনশনেই আফিমের নেশা থেকে বিশ্বকে মুক্ত করতে অধিকাংশ দেশেই পোস্ত চাষ নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। একমাত্র ভারতকে পোস্ত গাছ থেকে আফিমের আঠা উৎপাদন করার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। তবে, একই সঙ্গে বেশ কিছু কঠোর শর্তও আরোপ করা হয়েছিল। সেই সকল শর্ত মানার জন্য, ১৯৮৫ সালের নারকোটিক ড্রাগস অ্যান্ড সাইকোট্রপিক সাবস্ট্যান্স আইনে, ভারতে পোস্ত চাষ নিষিদ্ধ করা হয়। শুধুমাত্র সেন্ট্রাল ব্যুরো অব নারকোটিকস-এর পক্ষ থেকে যাদের লাইসেন্স দেওয়া হয়, তারাই পোস্ত চাষ করতে পারেন।