মায়ানমারের এই 'সোনার পাথর'
'বিশ্বে যা কিছু মহান সৃষ্টি চির কল্যাণকর, অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর...'
মেয়েদের (Women) নিয়ে চিন্তা যেন এক অবিরাম পর্ব। জন্মের পর থেকে বাবা-মা, যৌবনে প্রেমিক, বিয়ের পর স্বামী, আর মা হওয়ার পর সন্তান - সবাই ভাবে, সবাই চিন্তা করে। কিন্তু মেয়েরা কি নিজেদের নিয়ে চিন্তা করে?
নারী - অর্ধেক আকাশ। প্রচলিত এই শব্দবন্ধের ধারণা শুধু খাতায়-কলমে রয়ে গেছে। বাস্তব চিত্রটা ভীষণ অন্য। আর সেই অন্যের পরিমাণটা কত সেটা রোজ খবরের চ্যানেল খুললে বা খবরের কাগজ-পোর্টাল পড়লেই বোঝা যায়। শত শত উদাহরণ পাওয়া যাবে আরজি কর, জয়নগর, দুর্গাপুরের নামে।
সমস্যাটা কোথায়? মননে, চিন্তায়, দৃষ্টিভঙ্গিতে। কারণ সমাজের এক বড় অংশ খুব ভাল করেই জানে, নারী যদি নিজের শক্তি চিনে নেয়, তাহলে ইতিহাস নতুন করে লেখা হয়।
এই নারীশক্তির (Women Strength) এক প্রতীক রয়েছে, হাজার মাইল দূরে মায়ানমারের (Myanmar) মন প্রদেশের পাহাড়ে। ২৫ ফুট উঁচু এক খাড়া পাহাড়ের প্রান্তে ঝুলে আছে এক বিশাল গ্রানাইট পাথর, আর তার মাথায় জ্বলজ্বল করছে ২০ ফুট উঁচু এক সোনালি প্যাগোডা (Golden Pagoda)। নাম তার ক্যায়িকতিয়ো (Kyaikhtiyo) অর্থাৎ 'সন্ন্যাসীর মাথার ওপর প্যাগোডা।'
পৃথিবীর অন্যতম চর্চিত বৌদ্ধ তীর্থক্ষেত্র (Buddha Temple) এটি। বছরের পর বছর হাজার হাজার মানুষ আসেন এখানে। দেখতে চান, কীভাবে এক বিশাল পাথর শতাব্দীর পর শতাব্দী মাধ্যাকর্ষণের নিয়ম ভেঙে এক প্রান্তে দাঁড়িয়ে আছে। ২৫০০ বছর ধরে, ঠিক আগের মতোই।
প্রচলিত আছে, গৌতম বুদ্ধের একটি চুল (Strand of Hair) এই পাথরকে ধরে রেখেছে। তাইক থা নামে এক তপস্বীকে বুদ্ধ স্বয়ং সেই চুল উপহার দিয়েছিলেন, আর সেই চুলের আশীর্বাদেই আজও পাথরটি পড়ে যায় না, তাকে সরানোও যায় না।
গ্রানাইটের এই পাথরটি চমকায় কারণ ভক্তরা এটিকে সোনা দিয়ে মুড়ে রেখেছেন। বহু মানুষ অবাক হয়ে এখানে এসেছেন প্রকৃতি বলুন বা ঈশ্বর, তাঁর ম্যাজিক দেখতে। তবে মহিলারা এটি দূর থেকে দেখেই সাধ মেটান, কারণ এই মন্দিরে মহিলাদের প্রবেশাধিকার থাকলেও পাথরের কাছাকাছি বা তাকে ছোঁয়া নিষেধ।
এই নিষেধাজ্ঞা নারীশক্তির প্রকৃত উদাহরণ বহন করে। প্রাচীন মত অনুসারে, গৌতম বুদ্ধের চুল এই বিশালাকৃতির পাথরকে ধরে রাখলেও আজ পর্যন্ত এই পাথর কেউ সরিয়ে ফেলা তো দূর, নড়াতে পর্যন্ত পারেনি। তবে বহু আগে এক নারী সেটিকে কিঞ্চিৎ নড়াতে পেরেছিলেন বলে দাবি ওঠায় মনে করা হয়, একমাত্র এক নারীই পারেন এই পাথরকে নিজের জায়গা থেকে সরাতে! সেই কারণেই এই পাথরের আশপাশে নারী-প্রবেশ নিষেধ।
একটু ভাবলেই বোঝা যায়, এই নিষেধের আড়ালেও লুকিয়ে আছে স্বীকৃতি। এই বিশ্বাসই আসলে বলে দেয়, নারীর মধ্যেই আছে সেই শক্তি, যা পৃথিবীর ভারসাম্যকেও বদলে দিতে পারে। যেখানে শত শত পুরুষ একসঙ্গে চেষ্টা করেও পারেনি, সেখানে এক নারীর স্পর্শই যথেষ্ট।
একজন নারী একাধারে সৃষ্টিকর্তা, রক্ষক আর বিপ্লবী। সে তরুণী হতে পারে, মা হতে পারে, হতে পারে সিঙ্গল মাদার বা ডিভোর্সি, তার শক্তি কমে না। পুরুষ সমাজের সবচেয়ে বড় শিক্ষাটা এখানেই - যে শক্তির গর্ভ থেকে তার জন্ম, তাকে ছোট করে দেখা মানেই নিজেকে অস্বীকার করা।
তাই সবচেয়ে বেদনাদায়ক মুহূর্ত তখনই হয় যখন কোনও এক নারী শরীরের সব হাড় ভাঙার মতো কষ্ট সহ্য করে এমন পুরুষের জন্ম দেয় যে বলে, 'মেয়ে হয়েছে, লজ্জা...