বৎসলা
পৃথিবীর প্রাচীনতম হাতি বৎসলা, পৃথিবী ছাড়ল। দীর্ঘ জীবন। বৎসলার জন্ম কেরলের নিলাম্বুর জঙ্গলে। ১৯৭২ সালে নিয়ে আসা হয় মধ্যপ্রদেশের বোরি বণ্যপ্রাণী অভয়ারণ্যে। নির্দিষ্ট করে জন্মসাল না জানা গেলেও বৎসলার আনুমানিক বয়স ১০০ থেকে ১১০ বছর। জীবনের শেষ ৩২ বছর বৎসলা থেকেছে মধ্যপ্রদেশেরই পান্না টাইগার রিজার্ভ ফিল্ডে। হস্তি শাবকদের প্রতি স্নেহ এবং মায়া-মমতায় বৎসলা আদায় করে নেয় ‘দাদি’ সম্বোধন।
মঙ্গলবার দুপুরে সেই ‘বৎসলা দাদি’ চলে গেল চিরঘুমে। জীবিত থাকাকালীন শেষবার বৎসলা স্নান করতে যায় খাইরাইয়া নালায়। সোমবার সেখানেই রক্তাক্ত অবস্থায় পাওয়া যায় শতায়ু পার করা হস্তিনীকে। সামনের পায়ের নখে আঘাত। নিজের পায়ে দাঁড়ানোর পর্যন্ত শক্তি নেই। শেষের দিকে তো চোখেও দেখতে পেত না। চিকিৎসক থেকে শুরু করে অভয়ারণ্যের কর্মীরা বিবিধ চেষ্টা করেও পারেনি। মঙ্গলবার মৃত্যু হয় বৎসলার।
বর্তমান রিপোর্ট অনুযায়ী ভারতে এশিয় হাতির সংখ্যা ২৬০০০, দক্ষিণভারত ছাড়া এশিয় হাতিদের জন্য নিরাপদ জায়গায় উত্তর-পূর্ব ভারতও। বিশেষ করে ঝাড়খন্ড, পশ্চিমবঙ্গ, ওড়িশা, উত্তরাখন্ড, উত্তর প্রদেশেও এশিয় হাতিরা রয়েছে। INCU-এর রিপোর্ট অনুযায়ী এই প্রজাতির হাতিকে সংরক্ষণ না করলে বিলুপ্তি ঠেকানো অসম্ভব। এশিয় হাতির বৈজ্ঞানিক নাম এলিফাস ম্যাক্সিমাস। এদের প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো এদের লম্বা শুঁড়, যা দিয়ে এরা বিভিন্ন কাজ করে থাকে। এছাড়াও এদের কান বড় হলেও আফ্রিকান হাতির তুলনায় ছোট আকারের । এবং ধূসর রঙের ত্বক থাকে। এশীয় হাতিরা আকারে বেশ বড় হয়, এদের উচ্চতা প্রায় ২.৬ থেকে ৩.২ মিটার এবং ওজন ৩,৪০০ থেকে ৫,২০০ কেজি পর্যন্ত হতে পারে। এশীয় হাতিরা সাধারণত দলবদ্ধভাবে বাস করে এবং এদের সামাজিক গঠন বেশ জটিল। পেট ভরাতে এদের ১৫০ কেজি খাবার এবং ২০০ লিটার জলের প্রয়োজন হয়। ১৮ থেকে ২২ মাস গর্ভাবস্থায় থাকার পর জন্ম দেয় হাতি।
ধরাবাহিক পরিচর্যা এবং পর্যাপ্ত খাবারের জন্য দীর্ঘায়ু হয় বৎসলা। বৎসলা মধ্যপ্রদেশের পরিচিতি। ওর স্মৃতি আমাদের মনে থেকে যাবে। বৎসলার মৃত্যুতে আবেগঘন পোস্টে শোক প্রকাশ মধ্যপ্রদেশের প্রধানমন্ত্রী ড. মোহন যাদবের।