স্বপ্নপূরণ, বিশ্বকাপ জিতে নিল ভারত!
একটা সময় মনেই হচ্ছিল, বিশ্বকাপ হাতছাড়া হয়ে গেল বুঝি ভারতের। কারণ ক্রিজে ছিলেন লরা উলভার্ট। দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটারের ঝোড়ো ইনিংসে ভয় কাটছিল না হরমনপ্রীত কৌরের। সেমিফাইনালের শতরানের পর ফাইনালেও ব্যাটে আগুন ঝরান এই তারকা। কিন্তু তাঁর লড়াইও শেষরক্ষা করতে পারল না দলকে। অবশেষে তৃতীয়বারের চেষ্টায় ইতিহাস গড়ল ভারত—ঘরের মাঠে বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন হরমনপ্রীতদের ভারত। ফাইনালে দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারাল ৫২ রানে।
প্রথমে ব্যাট করে ভারত তোলে ৭ উইকেটে ২৯৮ রান। জবাবে দক্ষিণ আফ্রিকা গুটিয়ে যায় ৪৫.৩ ওভারে ২৪৬ রানে। ব্যাট হাতে ঝড় তোলেন শেফালি বর্মা, আর বল হাতে দাপট দেখান দীপ্তি শর্মা। এই দুই তারকার নৈপুণ্যে বিশ্বকাপের মুকুট ওঠে ভারতের মাথায়।
রবিবার ফাইনাল শুরুর আগে দীর্ঘ সময় ধরে চলল বৃষ্টি। ফলে ম্যাচ শুরু হতে প্রায় দু’ঘণ্টা দেরি হয়। বৃষ্টিবিঘ্নিত অবস্থায় টস জিতে বল করার সিদ্ধান্ত নেন উলভার্ট। অন্যদিকে, গোটা প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশ ম্যাচ ছাড়া আর কোনওবার টসের ভাগ্য সহায় হয়নি হরমনপ্রীতের, তবু দলের খেলার ধারায় তার প্রভাব পড়েনি।
প্রতিকা রাওয়াল চোট পেয়ে ছিটকে যাওয়ায় সেমিফাইনালের আগে সুযোগ পান তরুণী শেফালি বর্মা। অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে রান পাননি, কিন্তু ফাইনালে যেন নতুন রূপে দেখা গেল তাঁকে। প্রথম বল থেকেই আগ্রাসী মেজাজে ব্যাট করলেন, স্মৃতি মন্ধানাকে সময় দিলেন সেট হতে।
দুই ওপেনার মিলে গড়লেন শতরানের জুটি, ওভারপ্রতি ছয়ের বেশি রান উঠছিল অনায়াসে। ৪৯ বলে অর্ধশতরান পূর্ণ করেন শেফালি। ২১ বছর ২৭৮ দিন বয়সে বিশ্বকাপ ফাইনালে অর্ধশতরান করা সবচেয়ে কমবয়সি ভারতীয় ওপেনার হলেন তিনি—পুরুষ ও মহিলা ক্রিকেট মিলিয়েও। এতদিন এই রেকর্ড ছিল বীরেন্দ্র সহবাগের, যিনি ২০০৩ সালের বিশ্বকাপ ফাইনালে ২৪ বছর বয়সে অর্ধশতরান করেছিলেন। সহবাগই শেফালির ক্রিকেট আইডল, এবং তাঁর মতোই শুরু থেকেই আক্রমণাত্মক খেলার ধরন।
ফাইনালে শেফালির পারফরম্যান্স দেখার মতো। পুরুষ ও মহিলা—দু’দলেরই মধ্যে এক দিনের বিশ্বকাপে কোনও ভারতীয় ওপেনারের সর্বোচ্চ রানের ইনিংস এখন তাঁর দখলে। আগের ম্যাচে আড়াআড়ি শট খেলতে গিয়ে আউট হলেও ফাইনালে শেফালি পরিবর্তন আনেন নিজের টেকনিকে। সোজা ব্যাটে খেলেন, বল ব্যাটে সুন্দরভাবে আসে, এবং পুরো ইনিংসেই স্ট্রাইক রেট ছিল ১০০-এর ওপরে।
অর্ধশতরান হাতছাড়া হয় স্মৃতি মন্ধানার (৪৫ রান), কিন্তু ততক্ষণে ভারত পেয়েছিল দারুণ ভিত। পায়ের ক্র্যাম্পে ভুগে শেষে বড় শট খেলতে গিয়ে আউট হন শেফালি— ৭৮ বলে ৮৭ রানের দুর্দান্ত ইনিংস তাঁর।
শেষে দীপ্তি শর্মার অলরাউন্ড পারফরম্যান্স এবং দলের একতা মিলে ভারতীয়দের ঘরে তোলে প্রথম মহিলা বিশ্বকাপের ট্রফি—যার প্রতীক্ষা ছিল দীর্ঘ তিন টুর্নামেন্ট ধরে।