ক্যাচ মিসের প্রায়শ্চিত্ত করে জনগণমনের নায়ক ‘মিঁয়া’
একটা সময় ক্রিকেটবোদ্ধাদের মনে হয়েছিল, ম্যাচ চলে গিয়েছে ইংল্যান্ডের ঝুলিতে। দুই সেরা ব্যাটার ক্রিজে জমে গিয়েছেন, সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে সিরিজ জয়ের হুঙ্কার দিচ্ছেন। কিন্তু আশা ছাড়েননি তিনি। যাঁর একটা ভুলেই দাঁতনখ বের করে ঝাঁপিয়ে পড়ে সমালোচকরা, ভালো বল করেও যিনি থেকে যান কেবল পার্শ্বচরিত্র হয়েই। তবে সেসবের পরোয়া না করে এবার তিনি বিশ্বাস রেখেছেন নিজের উপর। আর সেই বিশ্বাসে ভর করেই ওভালে জয়ী ভারত। জিতে গেলেন বরাবরের সমালোচিত তিনি-মহম্মদ সিরাজ।
যিনি দেশের আগে বাকি সমস্ত কিছুকে বিসর্জন দেন। বাবার মৃত্যু- তবু তিনি রয়ে গেলেন সুদূর অস্ট্রেলিয়ায়। দেশের জার্সিতে খেলতে নেমে ছারখার করে দিলেন বিপক্ষকে। দেশের জন্য নির্দ্বিধায় খেলে যান টানা পাঁচ টেস্ট। ওয়ার্কলোড ম্যানেজমেন্ট কথাটা মনে হয় সিরাজের ডিকশনারিতে নেই। তাই তো চোট-আঘাত, ক্লান্তি, ধকল-সব উপেক্ষা করেই তিনি সর্বদা প্রস্তুত। পরপর টেস্ট খেললেও তাঁর পিঠে টান ধরে না, চোট লাগে না। রক্তমাংসে গড়া হলেও সিরাজ যেন লৌহমানব। আগ্রাসন, সিউ সেলিব্রেশনে তিনিই যেন দলের অলিখিত নেতা। কাঁধ ঝুলে যাওয়া টিমকে ফের চাঙ্গা হয়ে ওঠার অক্সিজেনও যোগান তিনি।
ওভাল টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে শতরানকারী ব্যাটারের ক্যাচ ছেড়েছিলেন সিরাজ। ওই একটা ভুলের পরেই সমালোচনার ঝড় বয়ে গিয়েছে তাঁর উপর দিয়ে। প্রথম ইনিংসে তাঁর অনবদ্য বোলিং, যার দাপটে দ্বিতীয় ইনিংসে লড়াইয়ের রসদ পেল ভারত-সেসব বেমালুম ভুলে গেল ক্রিকেটমহল। বরং একবাক্যে সকল ক্রিকেটবোদ্ধার আদালত রায় দিল, ‘সিরাজ তো ওভাল টেস্টটাই হাতছাড়া করে দিল।’ সমালোচকমহল মনে রাখে না, এই সিরাজই টানা ৫ টেস্ট খেলেন। ওয়ার্কলোড আর চোট-আঘাতে যখন পেস ব্রিগেড মূর্ছা যায়, তখনও ভাঙাচোরা বোলিং লাইন আপকে নেতৃত্ব দেন। শেষ নিশ্বাস পর্যন্ত লড়ে যাওয়ার বার্তা দেন। তবে এত কিছু করেও সিরাজের নায়কের সম্মান আর পাওয়া হয় না।