ইয়ালিনির জন্মদিনে ভক্তির ছোঁয়া
রবিবার নরম রোদ্দুরে যখন শহরটা অলস গতি মেপে এগোচ্ছে, ঠিক তখনই রাজ চক্রবর্তী ও শুভশ্রী গঙ্গোপাধ্যায়ের বাড়িতে দু’বছরে পা রাখা ইয়ালিনির জন্য তৈরি হচ্ছিল এক অন্য রকম জন্মদিনের পরিবেশ।
২০২৩ সালের ৩০ নভেম্বর জন্ম নেওয়া ছোট্ট ইয়ালিনি এবার দ্বিতীয় বছরে পা দিল। কিন্তু এই উদযাপনে ছিল না কোনও জাঁকজমকপূর্ণ সেলিব্রেশন, ছিল না বেলুন-ফুলের রঙিন পার্টি। বরং রাজ-শুভশ্রী সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন একান্ত ভক্তি ও শান্তির আবহেই এই বিশেষ দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখবেন। বাড়িতেই আয়োজন করা হয়েছিল জগন্নাথ দেবের পুষ্পাভিষেক।
দু’জনেই সেই শুভক্ষণে তোলা ছবি আর ভিডিও শেয়ার করেছেন সোশ্যাল মিডিয়ায়। দেখা গেল—পরিবার আর ঘনিষ্ঠদের মাঝেই ঘরোয়া আয়োজন, আর সকলের গায়েই সাদা পোশাক। শুভশ্রী পরেছিলেন সোনালি পাড়ের সাদা শাড়ি, চারদিকে কীর্তনের সুমধুর সুর, ফুলের পাঁপড়িতে স্নান করছে জগন্নাথ, বলরাম আর সুভদ্রা। ইউভান-ইয়ালিনিকেও দেখা গেল ছোট্ট হাত দিয়ে সেই পুষ্পাভিষেকের অংশ হতে। ভক্তিরসে ডুবে থাকা শুভশ্রীকে দেখে মনে হচ্ছিল—উৎসবের আনন্দ আর বিশ্বাসের পরশ দুটোই যেন পাশাপাশি দাঁড়িয়ে।
কিন্তু সোশ্যাল মিডিয়ায় যেখানে স্নেহ মেশে, সেখানে প্রশ্নও এসে পড়ে। শুভশ্রীর পোস্টেই কেউ লিখলেন, "ঠাকুরের পুষ্প অভিষেক করা ফুল আবার নিজেদের মধ্যে এমন ছোড়াছুড়ি করা যায় বুঝি?" পাল্টা উত্তরও এল সঙ্গে সঙ্গে—এক জন নেটিজেন ব্যাখ্যা করলেন যে মায়াপুরে শ্রীধামে ভগবানের পুষ্পাভিষেক এমন ভাবেই করা হয়; ভক্তের আনন্দই যে সেখানে প্রধান। আবার আরেকজন তির্যক মন্তব্য ছুঁড়ে দিলেন শুভশ্রীকে লক্ষ্য করে—"ভাগ্যিস সামনে কোনও মুভি গণেশ বা শিবঠাকুরকে নিয়ে নেই, তাহলে দুগ্ধাভিষেকও হত নিশ্চয়ই! এখন লহ গৌরাঙ্গের উপলক্ষে পুষ্পাভিষেক আর কীর্তন।"
এসবের উত্তর দিয়ে শুভশ্রী-ভক্তদের কেউ কেউ মনে করিয়ে দিলেন—গত বছরও একই পুজো হয়েছিল, ইয়ালিনির প্রথম জন্মদিনেও। পুরীর রথযাত্রায় প্রতি বছর যে রাজ-শুভশ্রী হাজির থাকেন, এমনকি ইয়ালিনিকে গর্ভে নিয়েও তাঁরা সেই যাত্রায় অংশ নিয়েছিলেন—সেটাও কেউ কেউ তুলে ধরলেন মন্তব্যে।
এই ভক্তিমূলক সেলিব্রেশনের মধ্যেই কিন্তু শিশুর জন্মদিনের ঐতিহ্যগত আনন্দও বাদ গেল না। রাত বারোটায় কেক কাটা হল দাদা ইউভানের সঙ্গে। আবার সন্ধেবেলাতেও ছোট্ট রাজকন্যে কাটল আর এক কেক। উৎসবের রং তাই দু’ধার—ভক্তি, আবার নিখাদ পারিবারিক সুখ।
তবু দিনশেষে প্রশ্নটা থেকেই যায়—সোশ্যাল মিডিয়ার এই তর্ক-বিতর্ক কি সত্যিই কোনও পরিবারিক বিশ্বাসের পথে ঢালাই হওয়া আনন্দকে মাপতে পারে? নাকি শেষমেষ ভক্তি, ভালোবাসা আর নিজের মতো করে জীবন উদযাপনের অধিকারটাই সবচেয়ে বড় শক্তি?