বাঙালিদের ত্বক জিনগত ভাবে কেমন
শীত শুরু হতেই বাঙালিদের সবচেয়ে বড় দুশ্চিন্তা—ত্বক রুক্ষ, খসখসে, টান টান! ঘরোয়া যত্নে আর্দ্রতা ধরে রাখার নানা উপায় আদিকাল থেকেই বাঙালি জানে। আধুনিক ডার্মাটোলজিও বলে—বাড়ির রান্নাঘরের কিছু উপকরণ শীতের শুষ্কতা ঠেকাতে (winter skincare) দারুণ কাজ করে। তবে কোনটা কতটা নিরাপদ, কোনটা বিজ্ঞানসম্মত—তা জেনে নেওয়া জরুরি।
বাঙালির ত্বক: জিনগত ভাবে কেমন?
ডার্মাটোলজিস্টদের মতে, দক্ষিণ এশিয়ার মানুষের ত্বকে সাধারণত মেলানিনের পরিমাণ বেশি, ফলে রোদে পুড়ে যাওয়ার সমস্যা তুলনামূলক কম হলেও শীতে শুষ্কতা বেশি দেখা যায়। বাঙালি ত্বক আবার সাধারণত নরম, পাতলা ও সেনসিটিভ, তাই অতিরিক্ত শীতে দ্রুত আর্দ্রতা হারায়।
চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ ডঃ সঞ্চারী সেন বলেন, “বাঙালিদের ত্বকে লিপিড ব্যারিয়ার তুলনামূলকভাবে কম, ফলে আর্দ্রতা ধরে রাখার জন্য তেল-মাখার অভ্যাস বহুদিনের। কিন্তু সব তেল সব ত্বকের জন্য নয়।”
পুরনো দিনের বাঙালি কোন ঘরোয়া রেমেডি ব্যবহার করত? (skincare home remedies)
সরষের তেল গরম করে সারা গায়ে মালিশ। নারকেল তেল। দই-হলুদ-চন্দন প্যাক। ঘি লাগানো। বেসন-মালাই প্যাক। এসবের অনেকটাই আজও কার্যকর, তবে আধুনিক গবেষণা দেখায়—সব উপায় সব ত্বকের জন্য সমান ভালো নয়।
শীতে ঘরোয়া স্কিনকেয়ার: কী করবেন, কী করবেন না
১. সরষের তেল—উপকার না ক্ষতি?
সরষের তেল বাঙালির ঘরের ঐতিহ্য। কিন্তু চর্মরোগ বিশেষজ্ঞদের মতে সতর্কতা জরুরি।
সরষের তেলের অন্যতম উপকারি দিক হল—ত্বকে গরম ভাব এনে রক্তসঞ্চালন বাড়ায়, অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল গুণ আছে,মালিশে শরীর রিল্যাক্স হয়। সম্ভাব্য ক্ষতির দিক হল— সেনসিটিভ স্কিনে অ্যালার্জি, র্যাশ বা লালচে ভাব দেখা যেতে পারে। সরষের তেলে থাকা আলাইল আইসোথায়োসায়ানেট ত্বকে জ্বালা বা পোড়া ভাব তৈরি করতে পারে। মুখে ব্যবহার একেবারেই নিষেধ।
ডঃ অরিন্দম মল্লিক বলেন, “শরীরে সরষের তেল লাগানো ক্ষতিকর নয়, তবে মুখে লাগালে অ্যালার্জির ঝুঁকি বেশি। বিশেষ করে বাচ্চাদের ক্ষেত্রে সাবধান।”
২. নারকেল তেল—বাঙালির ত্বকের সেরা বন্ধু
নারকেল তেল নিয়ে বিশেষজ্ঞদের মত প্রায় একরকম। উপকারের দিক হল—ফ্যাটি অ্যাসিড ত্বকের লিপিড ব্যারিয়ার মজবুত করে ও গভীরভাবে ময়েশ্চারাইজ করে। শিশু ও প্রাপ্তবয়স্ক—সবাইয়ের ত্বকের পক্ষে নিরাপদ। অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল ও অ্যান্টি-ফাঙ্গাল গুণ। কীভাবে ব্যবহার করবেন? স্নানের ১০-১২ মিনিট আগে হালকা গরম নারকেল তেল লাগান। স্নানের পর স্যাঁতস্যাঁতে ত্বকে আবার সামান্য লাগালে আর্দ্রতা দীর্ঘস্থায়ী হবে।
৩. অলিভ অয়েল—শীতে অলিভ অয়েল লাগালে সত্যিই কি ঠান্ডা লাগে?
বাংলায় অনেকের ধারণা—শীতে অলিভ অয়েল মাখলে নাকি গা ঠান্ডা করে দেয়। বিশেষজ্ঞরা বলেন—এটি ভুল ধারণা। অলিভ অয়েল ত্বকে ঠান্ডা ভাব তৈরি করে না; বরং এটি ওক্লুসিভ, অর্থাৎ একটা পাতলা লেয়ার তৈরি করে যা আর্দ্রতা ধরে রাখে।
উপকারের দিক হল—ভিটামিন–E সমৃদ্ধ। শুষ্ক ত্বককে নরম করে। গভীর ভাবে ময়েশ্চারাইজ করে ত্বককে। ক্ষতি কোথায়?—যাদের অয়েলি বা অ্যাকনে–প্রোন ত্বক, তাদের জন্য অলিভ অয়েল উপযুক্ত নয়। কারণ তা রোমকূপ বন্ধ করে ব্রণ বাড়াতে পারে। মুখে ব্যবহার ঠিক নয়, শরীরে ব্যবহার করা যেতে পারে। ডঃ পাপড়ি ঘোষ বলেন, “অলিভ অয়েল শীতে গা ঠান্ডা করে—এটা ভ্রান্ত ধারণা। তবে অয়েলি স্কিনে এটি ব্রণ বাড়াতে পারে। তাই ব্যবহারের আগে স্কিন টাইপ জানা জরুরি।”
৪. ঘরোয়া প্যাক—কোনগুলো সত্যিই কাজ করে? (skin care pack)
দই ও মধুর প্যাক শুষ্ক ত্বক নরম করে। ল্যাকটিক অ্যাসিড মৃত কোষ কমায়। ঘি গভীরভাবে ময়েশ্চার বাড়াতে সাহায্য করে। ঠোঁট ফাটায় দারুণ কাজ করে। চন্দন ও দইয়ের প্যাক ত্বক শীতল করে, চুলকানি কমায় অ্যালোভেরা জেল (তাজা হলে ভালো)। ত্বকে আর্দ্রতা ধরে রাখতে সাহায্য করে। ইরিটেশন কমায়। মসৃণ অনুভূতি দেয়।
শীতে আর্দ্রতা ধরে রাখতে বিশেষজ্ঞরা যেসব বিষয়কে সবচেয়ে জরুরি বলছেন—
- হালকা গরম জলে স্নান করুন (খুব গরম জল ত্বক শুকিয়ে ফেলে)
- স্নানের ৩ মিনিটের মধ্যে ত্বকে ময়েশ্চারাইজার লাগান
- ঘরে হিউমিডিফায়ার ব্যবহার করলে বাড়ে ত্বকের আর্দ্রতা
- ভাজাভুজি কমিয়ে জলীয় সবজি খান
- দিনে অন্তত ৮ গ্লাস জল খান
ডঃ দেবাশিস দত্ত বলেন, “শুষ্কতা কমাতে শুধু তেল মাখলেই হবে না, ভিতর থেকেও হাইড্রেশন দরকার।” বস্তুত বাঙালি ঘরেই ত্বকের শীতকালের যত্নের দারুণ সব উপায় আছে—সরষের তেল, নারকেল তেল, দই, মধু, ঘি, অ্যালোভেরা। তবে সেগুলো লাগানোর আগে নিজের স্কিন টাইপ জানা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষজ্ঞদের মতে, শীতে ত্বককে নরম, আর্দ্র ও উজ্জ্বল রাখতে ঘরোয়া যত্নই যথেষ্ট—যদি সঠিক উপায়ে ব্যবহার করা হয়। প্রয়োজনে চাইলে এই খবরটির সঙ্গে ইনফোগ্রাফিক টেক্সট, সোশ্যাল মিডিয়া ক্যাপশন বা ফিচার ইমেজ টেক্সটও তৈরি করে দিতে পারি।