ছোট্ট কাঁধে বড় দায়িত্ব!
পরনে সাদা ফুলহাতা টিশার্ট, সাদা প্যান্ট - সাদামাতা হয়তো একটু অনুজ্জ্বল লাগে, কিন্তু চোখ দু'টি ভীষণ দীপ্ত। তাতে বরং জ্বলজ্বল করছে জীবনের সঙ্গে লড়ার তাগিদ। সন্ধে নামে, একের পর এক স্টেশন পেরিয়ে যায় শিয়ালদহ লোকাল। সেদিকে তাকিয়ে লোক দেখার সময় নেই তার। যে বয়সে আরও পাঁচটা বাচ্চা মাঠেঘাটে খেলাধুলো করে বা বাবা-মায়ের কাছে লেটেস্ট ভিডিও গেমের জন্য বায়না করে, সেই বয়সেই তার কাঁধে উঠেছে সংসারের দায়ভার (boy sells papad in sealdah local)।
শিয়ালদহ লাইনে (Sealdah local viral story) ছেলেটিকে দেখা যায় প্রায়ই। পাঁপড় ফেরি করে সে। নাম... কী যায় আসে!
সোশ্যাল মিডিয়ায় সম্প্রতি ভাইরাল হয়েছে এক ভিডিও (viral video)। শান্ত চুপচাপ একটি ছেলে ট্রেনের কামরায় ঘুরে ঘুরে পাঁপড় বিক্রি করছে। কারও আবদার প্যাকেট কেটে দিতে হবে, দাবি অনুযায়ী প্যাকেট কেটে পাঁপড়ে মশলা ছড়িয়ে দেয় সে। কারও আবার গোটা প্যাকেটই চাই। মুখে হাসি নেই, তবে অদ্ভুত এক দৃঢ়তা আছে তার। হাতে রাখা কয়েকটা প্যাকেট বিক্রি হয়ে গেলে আবারও নতুন কয়েকটা আঙুলের ফাঁকে সাজিয়ে সে চলে যায় পরের জনের কাছে। আশপাশে অনেকেই দেখেন একবার ঘুরে ছেলেটিকে। কেউ ঘুরে ডাকেন এক প্যাকেট পাঁপড়ের জন্য।
আশা একটাই যে আজ হয়তো কালকের থেকেও বেশি কয়েকটা বিক্রি হবে।
বয়স কতই বা হবে, খুব বেশি হলে নয় কি দশ! দক্ষ হাতে বিক্রি, টাকা নেওয়া বলে দেয় জীবন এই বয়সেই তাকে শিখিয়েছে বেশ কিছু বাস্তব এবং কঠিন কিছু সত্য। কাঁধে ঝোলানো কালো রঙের ব্যাগ, যেখানে সে গুনে গুনে রোজের বিক্রির হিসাব তুলে রাখে, তার ভারেই বয়স বেড়েছে একধাক্কায় আরও অনেকটাই। সঙ্গে পাঁপড় বোঝাই ব্যাগ তো আছেই। এক জায়গায় বিক্রি হয়ে গেলে সাবলীলভাবে ব্যাগ তুলে নিয়ে যে এগিয়ে যায় পরের জনের দিকে।
কোনও জড়তা নেই, ভারী ব্যাগ তুলতে টালমাটাল হয়ে পড়া নেই, কারণ তার কাছে অন্য কোনও অপশনও যে নেই। বইভরা স্কুলব্যাগ কি এই দায়িত্বের থেকেও বেশি ভারী? ট্রেনের টাইম টেবিল মিলিয়ে তার পিছনে পিছনে দৌড়ই ছেলেটির কাছে জীবন মাঠের রেস।
সে কি স্কুলে যায়? খেলতে ইচ্ছে করে না? সোশ্যাল মিডিয়ার দৌলতে যদি ছেলেটি বা তার জীবনের এই দৌড় ভাইরাল হয়েও যায়, তাতে কি তার ভাগ্য বদলাবে? জানা নেই কারও।