হনুমানের ১৭ ফুট লম্বা লেজ গম্বুজের আকার নিয়েছে
অ্যারেঞ্জ হোক বা লাভ ম্যারেজ। বিয়ের সমস্ত আনুষঙ্গিক আচার-অনুষ্ঠানের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে মধুচন্দ্রিমা পর্ব। বিশেষত মিলেনিয়াল হোক বা জেন জি প্রজন্মের ছেলেমেয়েরা বিয়ের আগে থেকেই ঠিক করে ফেলে হানিমুন কোথায় হবে? বিশেষ করে সেলেব-লাইফের মতো চমক থাকা চাই বিয়ে ও হানিমুন দুটো ক্ষেত্রেই। সেক্ষেত্রে আর্থিক সামর্থ্য অনুযায়ী দেশের থেকে বিদেশও পাড়ি দিচ্ছেন নয়া প্রজন্মের যুবক-যুবতীরা। অনেকেরই চোখ রয়েছে মালয়েশিয়া যাত্রায়। বিশেষ করে সিনেমার শ্যুটিংয়ের স্বর্গোদ্যান কুয়ালা লামপুরে।
আর এখানেই রয়েছেন নবদম্পতিকে আশীর্বাদ দিতে বীর হনুমান। ঠিক তাই, হিন্দু মহাকাব্য রামায়ণের হনুমান হল একটি অনন্য চরিত্র। যাকে বাদ দিয়ে রামচন্দ্রের বনবাসী সীতাকে পুনরুদ্ধার করা সম্ভব ছিল না। হনুমানের অসামান্য শক্তি, বীরত্ব এবং ভক্তির প্রাবল্যে রামের কাছ থেকে অমরত্ব লাভ করেছিলেন হনুমান।
শুধু ভারতেই নয়, মালয়েশিয়াতেও রাম-হনুমানের অনন্য সাধারণ বিভিন্ন কীর্তি রয়েছে স্থানীয় ধর্মবিশ্বাসীদের মনে মনে। কুয়ালা লামপুরে এরকমই একটি শ্রী বীর হনুমানের মন্দির রয়েছে, যা অন্যতম আকর্ষণীয় স্থানে পরিণত হয়ে রয়েছে কয়েক দশক ধরে। শহরের প্রাণকেন্দ্র ব্রিকফিল্ডস এলাকায় অবস্থিত এই মন্দিরটি। ভাস্কর্য, পুরাণ, রঙের ঝকমকি ও ধর্মের একটি অন্যতম দর্শনীয় স্থান এই মন্দির।
এই মন্দিরেই রয়েছে ১৭ ফুট লম্বা লেজবিশিষ্ট হনুমান বিগ্রহ। যা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সবথেকে বড় লেজওয়ালা বজরঙ্গবলী। এই অতিকায় মূর্তির সবুজ রঙের লেজ এত লম্বা যে পাকিয়ে একটি গম্বুজের আকার ধারণ করে রয়েছে। লেজটিতে রয়েছে মোট ৪১টি পাক, যা মাটি থেকে ছাদ ছুঁয়েছে। দেখে তাক লেগে যাবে ধর্ম-অবিশ্বাসী নববিবাহিত দম্পতিদেরও।
শুধু এই বিগ্রহ ও লেজই নয়, মন্দিরেরও ইতিহাস কম নয়। প্রথম মন্দিরটি তৈরি হয় ১৯৪২ সালে। কেএল সেন্ট্রাল মনোরেল (KL Sentral Monorail) স্টেশনের গায়েই তৈরি হয়েছিল মন্দিরটি। কিন্তু এলাকার উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে মন্দিরটি এখন (১৯৯৯ সাল) স্থান পেয়েছে স্কট রোডে। তাতেও এর আকর্ষণ ও পর্যটকের সংখ্যায় কমতি হয়নি।
মন্দিরের ভিতরে রয়েছে ১০০টি বিশেষভাবে নির্মিত মূর্তি। প্রতিটিই হনুমানের। কোনওটি ভারতীয়, কোনওটি ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া এবং ইন্দোনেশিয়ার মূর্তি। প্রতিটি বিগ্রহ নিজস্ব ঘরানা, সংস্কৃতি, শিল্পকর্ম এবং ধর্মীয় ব্যাখ্যার দ্বারা নির্মাণ করা হয়েছে। মন্দিরের প্রবেশপথেই পড়বে দুটি বিশালাকৃতির মূর্তি। যা চৈনিক ভাস্কর্য ও সংস্কৃতির বাহক।
ভিতরে ঢুকলে দেখা যাবে উপরের দেওয়ালে ১০০৮টি ছোট ছোট হনুমান মূর্তি। মন্দিরের ছাদ দেখলে চোখ আটকেই থাকবে তার দিকে। হাতে আঁকা ছবিতে রয়েছে হনুমানের পূর্ণাঙ্গ জীবন বৃত্তান্ত, যার বেশ কয়েকটি রামায়ণের কাহিনি থেকে নেওয়া। সৌন্দর্য ছাড়াও স্থানীয়দের বিশ্বাস, এই মন্দির অত্যন্ত জাগ্রত। অনেকেই বিশ্বাস করেন, এই মন্দিরে হনুমানের পুজো দিলে অশুভ শক্তি থেকে নিস্তার মিলবে এবং বশীকরণ বা অন্যান্য তন্ত্রমন্ত্রের হাত থেকে রেহাই পাওয়া যাবে।