বহু নাম প্রকাশ্যে আনলেন শুভেন্দু অধিকারী
গতকাল, ৩০ অগস্ট বহু দ্বন্দ্বের অবকাশ মিটিয়ে অবশেষে ‘দাগি’ শিক্ষকদের একটি তালিকা প্রকাশ্যে এনেছে এসএসসি। তাতে নাম রয়েছে ১৮০৪ জনের। কিন্তু তারপর থেকেই তীব্র বিতর্ক শুরু হয়েছে রাজনৈতিক মহলে। বহু নাম সেখানে এমন রয়েছে, যাঁরা মুখ্যমন্ত্রী এবং শাসকদলের ঘনিষ্ঠ – এই নিয়ে তরজা সরগরম।
আজ সন্ধ্যায়, রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী শাসকদল তথা তৃণমূল ঘনিষ্ঠ কিছু নাম প্রকাশ্যে আনেন। তিনি জানান, ‘শিক্ষক নিয়োগে এই দুর্নীতিতে ২০২২ সালে অভিজিৎ গাঙ্গুলী যোগ্য অযোগ্য বাছাই করে দিয়েছিলেন। তাঁর রায়কে মুখ্যমন্ত্রী এবং তাঁর সরকার মানেননি। তা নিয়ে হাইকোর্ট, ডিভিশন বেঞ্চ, সুপ্রিম কোর্ট, হয়েছে। সেখানে এসএসসি কে বাছাই করে তালিকা দিয়ে বলা হয়েছিল, কিন্তু তারা দিতে পারেনি।’
তিনি বলেন, ‘জীবনকৃষ্ণ, পার্থ চ্যাটার্জি, লিপস অ্যামড বাউন্ডসের কালীঘাটের কাকু – ভাইপো ও তৃণমূল কংগ্রেসের তরফে যে টাকা তুলেছিল, তার বেশিরভাগটাই কালীঘটে গিয়েছে। সেটা নানাভাবে প্রমাণিতও হয়েছে।’ তৃণমূল কংগ্রেসের নেতাদের তিনি ‘সর্বভুক নেতা’ বলে কটাক্ষ করেন।
শুভেন্দু তাঁর বক্তব্যে স্পষ্ট করে দেন, মুখ্যমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ বৃত্তে থাকার সুবাদে কিছু ‘দাগি’রা চাকরি পেয়েছেন। তাঁদের নামও তিনি জানান। একে একে পাতা উল্টে নাম বলতে থাকেন। উত্তর দিনাজপুরের চোপড়ার বিধায়ক হামিদুল রহমানের মেয়ে রোশনারা বেগম, প্রাক্তন মন্ত্রী পরেশ অধিকারীর মেয়ে অঙ্কিতা অধিকারী, পিংলার জলচকের তৃণমূল অঞ্চল সভাপতি অজয় মাঝি, রাজপুর-সোনারপুরের তৃণমূল কাউন্সিলর কুহেলী ঘোষ, হিন্দোলগঞ্জের ব্লকের তৃণমূলের প্রাক্তন সভানেত্রী প্রিয়াঙ্কা মণ্ডল, হুগলীর জেলা পরিষদের গতবারের শিক্ষা কর্মাধ্যক্ষা সাইনা সুলতানা, তৃণমূল বিধায়ক তথা শাসকদলের মুখ্য সচেতক নির্মল ঘোষের বৌমা শম্পা ঘোষ, হুগলীর প্রাক্তন জেলা পরিষদ সদস্য বিভাস মালিক এবং তাঁর স্ত্রী সন্তোষী মালিক, খানাকুলের তৃণমূল নেতা মইনুল হকের স্ত্রী নমিতা আদক, ঝালদার প্রাক্তন তৃণমূল ব্লক সভাপতি দিন্দয়াল সিং, বারাসতের তৃণমূলের জেলা পরিষদ সদস্যের ছেলে মহম্মদ ইজামুল্লা।
এরকম অসংখ্য নাম রয়েছে বলে অভিযোগ শুভেন্দুর। তাঁর কথা, ‘এতদিন বাংলার মানুষ বলতেন, এখন তো তৃণমূল কংগ্রেস নিজেই স্বীকার করল ‘আমরা চোর’। আর সেটা সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে বলতে বাধ্য হয়েছে।’
তবে এই তালিকা অসম্পূর্ণ বলে দাবি করেছেন শুভেন্দু অধিকারী। আর এই তালিকা থেকে খুব সন্তর্পণে মুখ্যমন্ত্রী এবং অন্য অনেকেরই ঘনিষ্ঠদের নাম বাদ দেওয়া হয়েছে বলে তাঁর অভিযোগ।
তিনি আবেদনকারীদের উদ্দেশে বলেন, ‘আপনারা আবেদন করুন, এই তালিকার যেন ক্রস চেকিং করা হয়, তাও সিবিআইয়ের তদন্তের আওতায়।’ সুপ্রিম কোর্ট যেহেতু ৭ তারিখের পরীক্ষায় ‘অযোগ্য’দের না বসতে পারাটা নিশ্চিত করতে চেয়েছে, তাই তাদের এই ক্ষেত্রে একটা সুবিধা রয়েছে, এ কথাও মনে করিয়ে দেন তিনি। তাহলেই তালিকাটি সম্পূর্ণ, নাকি অসম্পূর্ণ – সেই নিয়ে যাবতীয় ধোঁয়াশা কাটবে বলে মনে করেন শুভেন্দু।