কেরলের মন্দিরকে 'যান্ত্রিক গজ' উপহার দিল পেটা ও জ্যাকি শ্রফ
কেরলের কোডুঙ্গালুরে প্রাচীন নেদিয়াথালি শ্রী শিব মন্দিরে এবার প্রবেশ করল হাতি। তবে সেটি রক্তমাংসের নয়, যান্ত্রিক। শনিবার পেটা ইন্ডিয়া ও বলিউড অভিনেতা জ্যাকি শ্রফ মিলে মন্দিরকে উপহার দিলেন ‘থালিস্বরন’ নামের এই জীবন্ত-সদৃশ যান্ত্রিক হাতিটি।
প্রায় তিন মিটার উঁচু ও ৮০০ কেজি ওজনের এই হাতিটি তৈরি হয়েছে রাবার, ফাইবার, ধাতু, মেশ, ফোম ও স্টিল দিয়ে। পাঁচটি মোটরে চলে এটি। মাথা নাড়তে পারে, কান নাড়তে পারে, চোখ-মুখ নড়াচড়া করে, লেজ দোলায়, শুঁড় তুলতে পারে, এমনকি জলও ছিটিয়ে দিতে পারে। পিছনে আসনেও বসানো যায়।
বিদ্যুতের সংযোগ থাকলেই হাতিটি চালানো যায়। মন্দির প্রাঙ্গণে এর শুভ উদ্বোধনের দিন ছিল ঐতিহ্যবাহী পঞ্চারি মেলম সঙ্গীতানুষ্ঠান। পেটা একটি বিবৃতিতে জানিয়েছে, মন্দির কর্তৃপক্ষ যে জীবন্ত হাতি কখনও কিনবে না বা ভাড়া নেবে না,সেই সিদ্ধান্তের স্বীকৃতি হিসেবেই এই বিশেষ উপহার দেওয়া হল।
জ্যাকি শ্রফ এই উদ্যোগের প্রশংসা করে বলেন, 'ঈশ্বরের সৃষ্টিরা আনন্দে বাঁচছে দেখে আমি ভীষণ খুশি হই। হাতিদের শিকলে বাঁধা, শক্ত মেঝেতে দাঁড়িয়ে থাকা বা পিঠে মানুষ বহন করার জন্য তৈরি করা হয়নি। তাদের নদীতে স্নান করা, জঙ্গলে ঘুরে বেড়ানো আর স্বাধীনভাবে বেঁচে থাকার জন্যই সৃষ্টি করা হয়েছে। সেই কারণেই আমি থালিস্বরনকে কেরলের এই পূজনীয় মন্দিরে দান করছি।'
কংগ্রেস সাংসদ বেনি বেহাননও উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। তিনি বলেন, 'এটি দেখতে হুবহু আসল হাতির মতো। অথচ পুরোপুরি নিরাপদ। বাচ্চারা এটিকে ছুঁতে পারবে, ছবি তুলতে পারবে, আনন্দে মেতে উঠবে, কোনও ঝুঁকি ছাড়াই। এ যেন ঐতিহ্যের সঙ্গে নিরাপত্তা ও সহমর্মিতার এক অনন্য মেলবন্ধন।'
মন্দির কমিটির সভাপতি সুরেশ বাবু জানান, এই যান্ত্রিক হাতি শুধু ঐতিহ্যের প্রতীক নয় বরং সব জীবজগতের প্রতি শ্রদ্ধারও প্রতীক। তাঁর কথায়, 'এই সহানুভূতিশীল পদক্ষেপের মাধ্যমে আমরা ভগবান গণেশকে পুজো করতে পারব, অথচ কোনও জীবন্ত প্রাণীর কষ্টও হবে না।'
পেটা ইন্ডিয়ার উদ্যোগে এর আগে কেরলের বিভিন্ন মন্দিরে ৬টি যান্ত্রিক হাতি দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ত্রিসূরের ইরিঞ্জাদাপ্পিলি রামন ও কম্বারা কান্নন, কোচির ত্রিকাইল মহাদেব মন্দিরের মহাদেবন এবং কান্নুরের এদয়ার মন্দিরের বাদক্কুম্বদ শংকরনারায়ণন উল্লেখযোগ্য। তিরুবনন্তপুরমের দু'টি মন্দিরেও রয়েছে পেটার দেওয়া ‘বালাধাসন’ ও ‘দেবী দাসন’।
থালিস্বরন এই নিয়ে পেটার একাদশ যান্ত্রিক হাতি এবং কেরলের সপ্তম। ত্রিসূরের মন্দিরে দেওয়া এটি তৃতীয়।
পেটা জানিয়েছে, এই হাতি সহজেই রাস্তায় বার করা যায়, শোভাযাত্রায় অংশ নিতে পারে। নিরাপদে ধর্মীয় অনুষ্ঠানও সম্পূর্ণ করা যায় এর সাহায্যে।
ঐতিহাসিক নেদিয়াথালি শ্রী শিব মন্দির কেরলের প্রাচীনতম মন্দিরগুলির একটি। বিশালাকার পশ্চিমমুখী শিবলিঙ্গের জন্য প্রসিদ্ধ। ইতিহাস বলছে, পেরুমাকান বংশের আমলে গড়ে ওঠা এই মন্দিরেই আক্রমণের সময় আশ্রয় নিয়েছিলেন রাজা রামবর্মা কুলশেখর। এখান থেকেই তিনি গড়ে তুলেছিলেন আত্মাহুতি দিতে প্রস্তুত চাভেরপদা (আত্মোৎসর্গী বাহিনী)।
প্রাণীকে কষ্ট না দিয়েও ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান পালনের এই নতুন দৃষ্টান্ত কেরলে এক নতুন দিশা খুলে দিল বলে মনে করছে পেটা।