আগেভাগেই কড়া নিষেধাজ্ঞা জারি রাজধানীতে
দিল্লি-এনসিআর (Delhi NCR) জুড়ে ফের বাড়ছে বায়ুদূষণ (Delhi Pollution)। শীতের আগমনে দূষণের মাত্রা দ্রুত উপরে উঠতে থাকায় আগেভাগেই আরও কঠোর বিধিনিষেধ চালু করল কমিশন (Commission) ফর এয়ার কোয়ালিটি ম্যানেজমেন্ট (CAQM)। ৪০১-এর বেশি একিউআই রেকর্ড হওয়ায় বর্তমানে রাজধানীতে GRAP-III বলবৎ। কিন্তু এবার GRAP-IV পর্যায়ের বেশ কিছু কড়া নিয়মও GRAP-III-এর আওতায় এনে পরিস্থিতি সামলাতে চায় কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রক সংস্থা।
CAQM-এর নির্দেশ, দিল্লি-সহ এনসিআরের রাজ্য সরকারগুলিকে এখনই সিদ্ধান্ত নিতে হবে যে সরকারি, বেসরকারি ও পৌরসভা দফতরের ৫০ শতাংশ কর্মী কি বাড়ি থেকে কাজ করবেন? বাকি কর্মীদের জন্য অফিসে উপস্থিতি কি সীমিত করা হবে? কেন্দ্রীয় সরকারি দফতরগুলিতেও ‘ওয়ার্ক ফ্রম হোম’-এর পথ খুলে দিতে পারে কেন্দ্র।
এর পাশাপাশি একাধিক GRAP-পর্যায়েও বদল এনেছে কমিশন। উদাহরণ হিসেবে বলা হচ্ছে, সরকারি দফতরে ‘স্ট্যাগার্ড টাইমিং’, যা এত দিন GRAP-III-এর অন্তর্ভুক্ত ছিল, তা নামিয়ে আনা হয়েছে GRAP-II-তে। অর্থাৎ AQI ৩০১–৪০০ হলেই লাগু হবে বদল। আবার পরিবহণ বাড়ানো ও দূষণ সংক্রান্ত পরামর্শ, যা এত দিন GRAP-II-এর অংশ ছিল, তা এখন GRAP-I-এ সরিয়ে আনা হয়েছে। ফলে AQI ২০১–৩০০ হলেই শুরু হবে প্রাথমিক সতর্কতা।
CAQM স্পষ্ট জানিয়েছে, “GRAP-এর সংশোধিত তালিকায় যে পরিবর্তনগুলি আনা হয়েছে, এনসিআরের সব বাস্তবায়নকারী সংস্থাকে তা অবিলম্বে কার্যকর করতে হবে।”
CPCB-এর মানদণ্ড অনুযায়ী, AQI ০–৫০ ‘ভাল’, ৫১–১০০ ‘সন্তোষজনক’, ১০১–২০০ ‘মধ্যম’, ২০১–৩০০ ‘খারাপ’, ৩০১–৪০০ ‘অতিমাত্রায় খারাপ’, আর ৪০১–৫০০ ‘গুরুতর’ বলে বিবেচিত। শুক্রবার সকালে দিল্লির AQI ছিল ৩৬০ যা অতিমাত্রায় খারাপ।
বায়ুদূষণের বাড়বাড়ন্ত দেখে বৃহস্পতিবার দিল্লি সরকার নভেম্বর–ডিসেম্বরে নির্ধারিত সব স্কুল-কলেজের মাঠের অনুষ্ঠান পিছিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দেয়। রাজধানীর শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতি আরও না-খারাপ করতে তাই আগেভাগেই সর্বোচ্চ সতর্কতার পথে হাঁটছে প্রশাসন।
উপগ্রহ চিত্রে ধরা পড়েছে, পাঞ্জাবে ১৬, হরিয়ানায় ১১ এবং উত্তরপ্রদেশে ১১৫টি জায়গায় ফসলের গোড়া পোড়ানো হচ্ছে। অতীতের থেকে সংখ্যাটি কম হলেও বাতাসের গতি উত্তরমুখী হওয়ায় তা ভেসে আসছে পার্শ্ববর্তী দিল্লি-এনসিআরের দিকে। ফলে গাড়ির দূষণের পাশাপাশি ধোঁয়ায় জর্জরিত দিল্লির বাসিন্দারা।
এই অবস্থায় ডাক্তাররা বলছেন, হাসপাতালে-চেম্বারে আচমকা শ্বাসকষ্ট ও দূষণ সংক্রান্ত অসুখে রোগীর সংখ্যা বেড়ে গিয়েছে। একে চিকিৎসা জরুরি অবস্থা বলে বর্ণনা করেছেন তাঁরা। এইমসের ডাক্তার অনন্ত মোহন বলেন, এখানকার দূষণ খুবই বিপজ্জনক মাত্রায় পৌঁছেছে এবং প্রাণঘাতী হয়ে উঠছে। গত ১০ বছর ধরে এই ঘটনা চলছে। তাঁর মতে, শুধু শ্বাসকষ্ট নয়, দূষণে মানুষের অন্যান্য অঙ্গেরও ক্ষতি হতে শুরু করেছে। কিছু কিছু অসুখ প্রাণঘাতী হয়ে পড়ছে। ডাক্তার বলেন, দূষণে হৃদপিণ্ড, মস্তিষ্ক এবং মানসিক স্বাস্থ্য নষ্ট হয়ে যায়। এমনকী গর্ভজাত সন্তানেরও ক্ষতি হচ্ছে। আমরা নিশ্চিত এখানকার মানুষের আয়ুষ্কাল কমে যাবে।