বিএলওকে আশীর্বাদ করছেন বৃদ্ধ দম্পতি
অন্যকে মা-বাবা সাজিয়ে ভোটার কার্ড করার অভিযোগ সামনে এসেছে। মৃত অনেক ভোটারের নাম বাদ গিয়েছে। কিন্তু এবার ২৬ বছর আগে নিরুদ্দেশ হয়ে যাওয়া ছেলেকে খুঁজে দিল SIR। শেষ বয়সে এসে ছেলের খোঁজ পেয়ে দু-হাত তুলে বিএলওকে আশীর্বাদ করছেন বৃদ্ধ বাবা-মা।
মেয়েদের বিয়ে হয়ে যাওয়ার পর একমাত্র ছেলেকে নিয়ে থাকতেন হাবড়ার বাসিন্দা প্রশান্ত দত্ত ও তার স্ত্রী সান্তনা দত্ত। প্রশান্তবাবু ও তাঁর ছেলে তরুণ দত্ত একসময় ধান কেনাবেচার ব্যবসা করতেন। তবে ব্যবসায় লোকসান হতে থাকায় এবং বেশ কিছু লোকের কাছে দেনা করে তা শোধ করতে না পারায় অপমানে কাউকে কিছু না জানিয়ে বাড়ি ছাড়েন তরুণ। সে প্রায় ২৬ বছর আগের কথা।
বৃদ্ধ দম্পতি তারপর থেকে আর ছেলেকে দেখেননি। তবে পাওনাদারদের চাপ দিন দিন বেড়ে যাওয়ায় জায়গা জমি বিক্রি করে সেই দেনা মিটিয়েছেন। এরপরেও ছেলের খোঁজ না পাওয়ায় কার্যত অসহায় হয়ে পড়েছিলেন তার বৃদ্ধ বাবা-মা। সম্প্রতি SIR শুরু হতে বৃদ্ধ দম্পতি সঙ্গে তার ছেলে তরুণ দত্তের ফর্মও বাড়িতে এসে দিয়ে গিয়েছিলেন স্থানীয় বিএলও। প্রশান্তবাবু তাঁর নিজের এবং স্ত্রী ও ছেলের ফর্ম পূরণ করে স্থানীয় বিএলওর কাছে জমা দেন।
গত মাসের ২৯ তারিখ হাবড়ার ২৫৯ নম্বর বুথের বিএলও তপন ধর সেই ফর্ম নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইটে ম্যাপিং করার সময় দেখতে পান প্রশান্তর ছেলে তপনের নাম পশ্চিম মেদিনীপুরের একটি জায়গা থেকে আগেই ম্যাপিং করা হয়ে গিয়েছে। বিএলও তপন ধর তখন পশ্চিম মেদিনীপুরের যে জায়গা থেকে তরুণ দত্তের নাম অনলাইনে আপলোড করা হয়েছে, সেই জায়গার বিএলওর সঙ্গে যোগাযোগ করেন। জানান, তরুণ তাঁর এলাকার ভোটার। তাঁর বাবা সমস্ত নথি দিয়ে গেছেন।
সে সময় ফোনের অন্য প্রান্ত থেকে পশ্চিম মেদিনীপুরের বিএলও জানান, তরুণ নিজে এসে তাকে ফর্ম জমা দিয়ে গেছেন। এরপর ওইদিন রাত আটটা নাগাদ পশ্চিম মেদিনীপুরের সেই বিএলও মারফত হাবড়ার ২৫৯ নাম্বার বুথের বিএলও তপন ধর, তরুণ ও তাঁর পরিবারের সঙ্গে ফোনে কথা বলেন। বাবা-মা জানতে পারেন ২৬ বছর আগে বাড়ি ছেড়ে যাওয়া তরুণ মেদিনীপুরে স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন। কলেজপড়ুয়া ছেলেও রয়েছে তাঁর।
এরপরই তরুণের ছেলে তপনবাবুর কাছ থেকে ফোন নম্বর নিয়ে তার দাদু প্রশান্তকে ফোন করে এবং দুই পরিবারের মধ্যে কথোপকথন হয়। বৃদ্ধ দম্পতি তরুণকে জানায় সমস্ত দেনা তাঁরা মিটিয়ে দিয়েছেন। সে যেন বাড়িতে চলে আসে, আর পাওনাদাররা তাঁকে চাপ দিতে পারবে না, তাতে আশ্বস্ত হন তরুণ। ইতিমধ্যে দিদিদের সঙ্গেও তার ভিডিও কলে কথা হয়েছে। এখন বৃদ্ধ বাবা মার কাছে ফিরতে চান তরুণ।