বিচার বিচারের মতোই হবে: মুখ্যমন্ত্রী
আদালতের রায়ে বড় স্বস্তি প্রাথমিক শিক্ষকদের (Primary TET)। কলকাতা হাইকোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের একক বেঞ্চের ৩২ হাজার চাকরি বাতিলের নির্দেশ এদিন খারিজ করে দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট (Calcutta High Court)। আদালতের রায় সামনে আসতেই শিক্ষক মহলে উচ্ছ্বাস। তাঁরা বলছেন, আমরা কলঙ্ক মুক্ত হলাম।
রায় নিয়ে খুশি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও (Chief Minister Mamata Banerjee)। মালদহ থেকে মুর্শিদাবাদে ফেরার পথে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “বিচারকরা মানবিক দৃষ্টিতে ব্যাপারটা দেখেছেন। শিক্ষকদের পরিবার রক্ষা পেয়েছে, আমি খুশি। কথায় কথায় কোর্টে গিয়ে চাকরি খেয়ে নেওয়া ঠিক নয়। আমাদের লক্ষ্য চাকরি দেওয়া, চাকরি কেড়ে নেওয়া নয়।”
এই মামলার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকা নাম— প্রাক্তন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। তাঁর নির্দেশেই বাতিল হয়েছিল ৩২ হাজার চাকরি। পরে বিচারপতি পদে থাকা অবস্থাতেই ইস্তফা দিয়ে রাজনৈতিক ময়দানে নামেন তিনি, বর্তমানে তমলুকের বিজেপি সাংসদ। রায় নিয়ে তাঁকে উদ্দেশ করে মুখ্যমন্ত্রী কোনও মন্তব্য করতে চাননি। তাঁর স্পষ্ট প্রতিক্রিয়া, “আমি কারও সম্পর্কে কিছু বলব না। আমার ছোট ছোট ভাইবোনদের চাকরি বেঁচেছে— এটাই বড় কথা।”
মুখ্যমন্ত্রী আরও জানান, “বিচার বিচার অনুযায়ীই হবে, আদালতকে আমরা সম্মান করি।”
২০১৬ সালের এসএসসি নিয়োগ দুর্নীতির জেরে প্রথমে বাতিল হয় সম্পূর্ণ প্যানেল। সেই রায় বহাল রাখে সুপ্রিম কোর্টও। পরবর্তীতে প্রাথমিক নিয়োগে বেনিয়মের অভিযোগে নতুন করে মামলা ওঠে হাইকোর্টে। ২০২৩ সালে তৎকালীন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় প্রশিক্ষণহীন প্রায় ৩২ হাজার শিক্ষককে চাকরিচ্যুত করার নির্দেশ দেন। তাঁর নির্দেশ ছিল, চাকরি বাতিল হলেও শিক্ষকরা স্কুলে যাবেন। পাশাপাশি তিন মাসের মধ্যে নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরুরও নির্দেশ দেওয়া হয়, যেখানে কেবল যোগ্য প্রার্থীরাই চাকরি পাবেন।
এই রায়কে চ্যালেঞ্জ করে পর্ষদ যায় ডিভিশন বেঞ্চে। বিচারপতি সুব্রত তালুকদার ও বিচারপতি সুপ্রতিম ভট্টাচার্যের বেঞ্চ সেই চাকরি বাতিলের রায়ের ওপর অন্তর্বর্তী স্থগিতাদেশ দেন। তবে একই সঙ্গে নির্দেশ দেন, নতুন করে নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করতেই হবে। এরপর রাজ্য ও পর্ষদ দু’পক্ষই সুপ্রিম কোর্টে যায় দুই রায়কে চ্যালেঞ্জ করে। সুপ্রিম কোর্ট মামলা ফেরত পাঠায় কলকাতা হাইকোর্টে, নির্দেশ দেয়— বাদি-বিবাদী দুই পক্ষের বক্তব্য শুনে ডিভিশন বেঞ্চ চূড়ান্ত রায় দিক।
এদিন মামলার রায় (Verdict Case) দিতে গিয়ে আদালতের পর্যবেক্ষণ, এভাবে ৯ বছর পর একসঙ্গে এতজনের চাকরি কেড়ে নেওয়া হলে বিরূপ প্রভাব পড়বে, শিক্ষা ব্যবস্থায় বিপর্যয় নেমে আসতে পারে। ১২ নভেম্বর শেষ হয়েছিল শুনানি পর্ব। প্রায় তিন সপ্তাহ পরে এল বহু প্রতীক্ষিত রায়। স্বভাবতই স্বস্তিতে প্রাথমিক শিক্ষকরা।